আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভরপেট ভাত-ডাল-মাছের ঝোল খাওয়ার পর ভাতঘুমের আগে এক পশলা স্নান- ভ্যাপসা গরমের দিনে এর চেয়ে আরামদায়ক আর কী-ই বা হতে পারে! কিন্তু এই অভ্যাসেই লুকিয়ে রয়েছে বিপদ। বাড়ির বয়স্করা প্রায়শই বারণ করেন, বলেন, “খাওয়ার অব্যবহিত পরেই স্নান করতে নেই।” আমরা অনেকেই এই পরামর্শকে সেকেলে ধারণা বা কুসংস্কার ভেবে উড়িয়ে দিই। কিন্তু জানেন কি, এই নিষেধের পিছনে রয়েছে বৈজ্ঞানিক এবং আয়ুর্বৈদিক ব্যাখ্যা? প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসা এই ধারণাটি আসলে আমাদের শরীরের ভালর জন্যই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের শরীর একটি জটিল যন্ত্রের মতো কাজ করে। প্রতিটি কাজের জন্য নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে। যখন আমরা খাবার খাই, তখন সেই খাবার হজম করার জন্য আমাদের পরিপাকতন্ত্র পুরোদমে কাজ শুরু করে। এই হজম প্রক্রিয়ার জন্য পাকস্থলী এবং অন্ত্রের আশপাশে প্রচুর পরিমাণে রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন হয়। কারণ রক্তের মাধ্যমেই পরিপাকতন্ত্র প্রয়োজনীয় শক্তি এবং অক্সিজেন পায়, যা খাবারকে ভেঙে পুষ্টিগুণ শোষণে সাহায্য করে। এক কথায়, খাওয়ার পর আমাদের শরীরের অনেকটা শক্তি হজমকার্যে ব্যবহৃত হয়।
আরও পড়ুন: বাবা ভাঙ্গা আর নস্ত্রাদামুস দু’জনেই সাবধান করেছিলেন! ২০২৫-এর ভয়ঙ্কর ভবিষ্যদ্বাণী শুনে কাঁপছে গোটা বিশ্ব
সমস্যা শুরু হয় যখন এই হজম প্রক্রিয়া চলার মাঝেই আমরা স্নান করতে যাই। স্নানের সময়, বিশেষত ঠান্ডা বা স্বাভাবিক তাপমাত্রার জল গায়ে পড়লে, শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ করে কিছুটা কমে যায়। সেই পরিবর্তিত তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য আমাদের মস্তিষ্ক ত্বক এবং ত্বকসংলগ্ন রক্তনালীগুলিতে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়। ফলে, যে রক্তস্রোত পাকস্থলীতে গিয়ে হজমে সাহায্য করছিল, তার একটি বড় অংশ ত্বকের দিকে প্রবাহিত হতে শুরু করে।
এর ফলস্বরূপ হজম প্রক্রিয়া শ্লথ হয় বা ব্যাহত হয়। কারণ পরিপাকতন্ত্র প্রয়োজনীয় শক্তি পায় না। এর থেকেই শুরু হতে পারে শারীরিক অস্বস্তি- বদহজম, পেট ফাঁপা, গ্যাস-অম্বল এবং বুকে জ্বালার মতো সমস্যা। অনেক সময় পেটে ব্যথা বা ক্র্যাম্পও হতে পারে। দীর্ঘ দিন ধরে এই অভ্যাস চলতে থাকলে হজমের গুরুতর সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রও এই ধারণাকেই সমর্থন করে। আয়ুর্বেদ মতে, খাবার খাওয়ার পর আমাদের শরীরে ‘জঠরাগ্নি’ বা পাচক অগ্নি প্রজ্বলিত হয়, যা খাবারকে সঠিকভাবে হজম করতে সাহায্য করে। কিন্তু খাওয়ার পরেই স্নান করলে শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় এই অগ্নি নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ফলে খাবার ঠিকমতো হজম হয় না এবং শরীরে ‘আম’ বা বিষাক্ত পদার্থের সৃষ্টি হয়, যা নানা রোগের কারণ হতে পারে।
আরও পড়ুন: ৩ মিনিটে ভাঙা হাড় জুড়ে যাবে! যুগান্তকারী ‘আঠা’ আবিষ্কার চীনের বিজ্ঞানীদের, বদলে যাবে চিকিৎসাশাস্ত্রের রূপরেখা?
তাহলে করণীয় কী?
চিকিৎসকদের পরামর্শ, সুস্থ থাকতে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলা উচিত।
১। খাবার খাওয়ার পর স্নান করার জন্য অন্তত এক থেকে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করা আদর্শ। এই সময়ের মধ্যে পাকস্থলী তার প্রাথমিক হজমের কাজ অনেকটাই সেরে ফেলে।
২। একইভাবে, খুব ভারী কোনও ব্যায়াম বা কঠোর শারীরিক পরিশ্রমও খাওয়ার অব্যবহিত পরে করা উচিত নয়।
৩। তবে স্নান করে এসে খাবার খেতে কোনও বাধা নেই। বরং, স্নান শরীরকে সতেজ করে হজমের জন্য প্রস্তুত করতে সাহায্য করে।
সুতরাং, বাড়ির বড়দের কথাকে কুসংস্কার ভেবে উড়িয়ে না দিয়ে তার পিছনের বিজ্ঞানকে বোঝা জরুরি। সামান্য কটি নিয়ম মেনে চললেই অনেক শারীরিক অস্বস্তি এড়ানো সম্ভব।
