আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিজেপি শাসিত ওড়িশার পর এবার 'ডবল ইঞ্জিন' সরকারের যোগীর উত্তরপ্রদেশে বাংলাদেশি সন্দেহে হেনস্থা শিকার হলেন মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়া জেলার ১৩ জন পরিযায়ী শ্রমিক। মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার শীর্ষ আধিকারিকদের সময়মতো হস্তক্ষেপে বুধবার সন্ধে নাগাদ উত্তরপ্রদেশ পুলিশের হেফাজত থেকে মুক্তি পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের ২ জেলার সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকরা। 

জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনী প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর যোগী রাজ্যের পুলিশ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের  আটক করে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য কঠোর অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশি নাগরিক চিহ্নিত করতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ভাষাভাষী মানুষকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে যোগী রাজ্যে। 

গত বেশ কয়েক বছর ধরেই মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙ্গা, শক্তিপুর, বহরমপুর এবং নওদা-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর যুবক নির্মাণ বা অন্যান্য শিল্পে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করার জন্য উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জেলায় যান। সাম্প্রতিক সময়ে ভাষা ও ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে তাঁদের বাংলাদেশি তকমা দিয়ে উত্তরপ্রদেশের যোগী রাজ্যের সরকার হেনস্থা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

এবছরেরই সেপ্টেম্বর মাসে মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন এলাকার ১৮ জন পরিযায়ী শ্রমিককে বেআইনিভাবে উত্তরপ্রদেশের বস্তি জেলার নগর থানায় তিনদিন ধরে আটক করার অভিযোগ উঠেছিল উত্তরপ্রদেশের পুলিশের বিরুদ্ধে। পুলিশের হাতে আটক থাকা ব্যক্তিরা প্রত্যেকে  পেশায় ফেরিওয়ালা বা রাস্তার পাশে বিভিন্ন রকম  জিনিসপত্র বিক্রি করতেন। 

পরবর্তীকালে মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার হস্তক্ষেপে ওই পরিযায়ী শ্রমিকরা মুক্তি পান। সেই ঘটনার রেশ মেলানোর আগেই ফের একবার মুর্শিদাবাদ জেলার ১২ জন এবং নদিয়া জেলার এক পরিযায়ী শ্রমিককে বাংলাদেশি সন্দেহে  বেআইনিভাবে আটকে রাখার অভিযোগ উঠল উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে। 

যদিও বুধবার সন্ধে নাগাদ মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার শীর্ষ আধিকারিকদের হস্তক্ষেপে ১৩ জন পরিযায়ী শ্রমিককে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ মুক্তি দিয়েছে বলে  জানা গিয়েছে। মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার (লালবাগ) রাসপ্রীত সিং বলেন, "আটক হওয়া পরিযায়ী শ্রমিকরা  বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় থাকছিলেন। বাংলাদেশি সন্দেহে ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের বুধবার উত্তরপ্রদেশের বারাণসী জেলার চোলাপুর থানার আধিকারিকরা আটক করেছিলেন।"

তিনি জানান, "ধৃত পরিযায়ী  শ্রমিকদের পরিবারের তরফ থেকে এই ঘটনা জানতে পারার পর আমরা তাঁদের নাগরিকত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে সেই তথ্য উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছি। এর পরই ওই পরিযায়ী শ্রমিকরা মুক্তি পেয়েছেন।"
 
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে ,গত কয়েক মাস আগে বেলডাঙা থানার বিভিন্ন গ্রামের ১০ জন, নদিয়া জেলার একজন, নওদা থানার একজন এবং রেজিনগর থানার এক ব্যক্তির পরিযায়ী শ্রমিকের কাজের  জন্য উত্তরপ্রদেশে গিয়েছিলেন। 

সূত্রের খবর, উত্তরপ্রদেশ পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়া জেলার পরিযায়ী শ্রমিকরা  প্রত্যেকেই নিজেদের ভারতীয় হওয়ার যাবতীয় নথি যেমন- আধার কার্ড, রেশন কার্ড, প্যান কার্ড দেখিয়েছিলেন। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ পুলিশের আধিকারিকরা মুর্শিদাবাদ ও নদিয়া  জেলার পরিযায়ী শ্রমিকদের দেখানো নথিকে মান্যতা দেননি বলে অভিযোগ।তাঁদের দাবি ছিল, বাংলা ভাষাভাষী ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্ত নথি জাল এবং তাঁরা আদতে বাংলাদেশের নাগরিক। 

উত্তরপ্রদেশ পুলিশের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে এক পরিযায়ী শ্রমিক জানান, "আমরা বহুবার নিজেদের ভারতীয় হিসেবে দাবি করলেও আমাদের ধর্মীয় পরিচয় এবং ভাষার কারণে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ আমাদের বাংলাদেশি  তকমা দিয়ে দেয়। মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার আধিকারিকরা সময়মতো হস্তক্ষেপ করায় আমরা দ্রুত উত্তরপ্রদেশ পুলিশের হেফাজত থেকে মুক্তি পেয়েছি। 

আতঙ্কিত পরিযায়ী শ্রমিকরা জানিয়েছেন, এর আগেও তাঁরা বহুবার উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জেলায় কাজ করতে গিয়েছেন কিন্তু এরকম ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন তাঁরা আগে হননি। একাধিক পরিযায়ী শ্রমিক জানিয়েছেন উত্তরপ্রদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে ফেরার ট্রেনের টিকিট নিশ্চিত হওয়ার পরই তাঁরা যে যার নিজের বাড়িতে ফিরে আসবেন।