ছোটবেলা থেকেই আমাদের বিদ্যুতের তারে হাত দিতে বারণ করা হয়। বিদ্যুতের সংস্পর্শে এলে মারাত্মক বিপদ হতে পারে, এই ভয় থাকে সকলের মনে। যদিও পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে বসে থাকে বৈদ্যুতিন তারে। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন হাজার হাজার ভোল্ট বিদ্যুৎ প্রবাহিত সেই তারে বসেও কেন পাখিরা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় না? এর পিছনে কি আদৌ কোনও বিজ্ঞান আছে? নাকি পাখিরা নিজস্ব জাদুতে অনায়াসে বৈদ্যুতিক তারে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটিয়ে দিতে পারে? আসুন জেনে নেওয়া যাক-
ইলেকট্রিক ওয়্যারে বাদুড় বসলেই শরীরে কাঁপুনি ধরতে থাকে এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারাও যায়। কিন্তু তারে বসে দিব্যি আরাম করে উপভোগ করে অন্যান্য পাখিরা। আর এর পিছনে রয়েছে অত্যন্ত সহজ ও সাধারণ একটি বিজ্ঞান। এক্ষেত্রে বিদ্যুতের একটি মৌলিক ধারণা কাজ করে। আসলে পাখিরা শুধু একটি তারের উপর বসে। উভয় তারকে একসঙ্গে স্পর্শ করলে তারাও মারা যায়। কিন্তু সেটা সাধারণত হয় না। কারণ পাখিরা উভয় তারকে একসঙ্গে স্পর্শ করতে পারে না।
আরও পড়ুনঃ আপনার সঙ্গী কি শুধুই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকেন? কোন কোন লক্ষণ দেখে বুঝবেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাখি যখন শুধুমাত্র একটি বিদ্যুতের তারে বসে, তখন তাদের দুই পা একই ভোল্টেজের তার স্পর্শ করে। ফলে তাদের শরীরের মধ্য দিয়ে বিদ্যুতের প্রবাহ ঘটে না। বিদ্যুতের শক লাগার জন্য "পটেনশিয়াল ডিফারেন্স" বা ভোল্টেজের পার্থক্য থাকা জরুরি। কিন্তু একটিমাত্র তারে বসার কারণে এমন কোনও পার্থক্য তৈরি হয় না। বিদ্যুতের তার অত্যন্ত ভাল পরিবাহী হলেও পাখির শরীর তুলনামূলকভাবে দুর্বল 'কন্ডাক্টর'। ফলে বিদ্যুতের প্রবাহ তাদের শরীরে প্রবেশ করলেও তা এতই সামান্য যে, সেটি পাখির জন্য ক্ষতিকর নয়।

আসলে পাখির শরীর ছোট হওয়া, তার পায়ের মাঝে দূরত্ব কম থাকা এবং মাটি থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকা—এই তিনটি বিষয়ই এক্ষেত্রে পাখিকে নিরাপদ রাখে। যেহেতু তারা কোনো বিদ্যুৎ সার্কিট সম্পূর্ণ করে না, তাই তাদের দেহে বিদ্যুৎ প্রবাহ ঘটে না। একইভাবে মানুষের ক্ষেত্রে বিষয়টি উল্টো হয়। আমরা বিদ্যুতের তার স্পর্শ করার সঙ্গে মাটির সংস্পর্শে থাকি। ফলে উচ্চ ভোল্টেজ থেকে মাটির শূন্য ভোল্টেজ পর্যন্ত বিদ্যুৎ শরীর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই বিশাল ভোল্টেজ পার্থক্যের কারণে মানুষের ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী ঝুঁকি তৈরি হয়।
যদিও পাখিও সবসময়ে নিরাপদ থাকে তা নয়। একসঙ্গে দুটি ভিন্ন ভোল্টেজের তার বা একটি গ্রাউন্ড করা বস্তু যেমন খুঁটি বা ট্রান্সফরমার স্পর্শ করলে সেটি পাখির জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। কারণ তখন সার্কিট সম্পূর্ণ হয় এবং বিদ্যুৎ সরাসরি পাখির দেহ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মৃত্যু ঘটাতে পারে।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, পাখিরা বিদ্যুতের তারে নিরাপদে বসে থাকে কারণ তারা কোনও ভোল্টেজ পার্থক্যের মুখোমুখি হয় না। তবে সামান্য ভুল হলেই, যেমন একই সঙ্গে দুই ভিন্ন ভোল্টেজের তার মাটি স্পর্শ করলে, তারাও মারাত্মকভাবে আহত বা নিহত হতে পারে।
