হৃদরোগ সাধারণত পুরুষদের হয়, কিছু দিন আগেও এমনটাই মনে করা হত। কিন্তু দিনকেদিন মহিলাদের এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এমনকী কম বয়সেও মারণ রোগ ঘিরে ধরছে মহিলাদের। বিশেষ করে মেনোপজের পর হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। 

মহিলাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হল মেনোপজ। এই সময়ে শুধু হরমোনাল পরিবর্তনই হয় না, হৃদযন্ত্রের উপরও  মারাত্মক প্রভাব পড়ে। চিকিৎসকদের মতে, মেনোপজের পর মহিলাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক গুণ বেড়ে যায়। তাই ঠিক সময়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।

কেন মেনোপজে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে

মেনোপজে ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ হঠাৎ করে কমে যায়। ইস্ট্রোজেন হৃদযন্ত্রের রক্তনালীকে নমনীয় রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু এর ঘাটতি হলে রক্তচাপ বেড়ে যায়, কোলেস্টেরলের ভারসাম্য নষ্ট হয় অর্থাৎ খারাপ কোলেস্টেরল বাড়ে, হৃদপিণ্ডের চারপাশে ফ্যাট জমে যায়। যার ফলস্বরূপ হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়।এছাড়াও মহিলাদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ অনেক সময় পুরুষদের তুলনায় ভিন্নভাবে প্রকাশ পায়। ফলে তা দ্রুত শনাক্ত করা যায় না। যা ঝুঁকির অন্যতম কারণ। 

আরও পড়ুনঃ ঘন ঘন বুক জ্বালা মানেই গ্যাস্ট্রিক নয়, নিঃশব্দে মারণ রোগে শেষ হতে পারে শরীর! কখন সতর্ক হবেন?

হার্ট অ্যাটাকের কোন কোন লক্ষণ দেখলে সতর্ক হবেন

১. বুকের ব্যথা বা চাপ অনুভব: বুক ভারী লাগা বা চাপ সৃষ্টি হওয়া যা ঘাড়, হাত, চোয়াল বা পিঠে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

২. শ্বাসকষ্ট: হালকা কাজেও হাপিয়ে পড়া বা নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।

৩. হৃদস্পন্দনে অনিয়ম: হঠাৎ খুব দ্রুত বা খুব ধীরে বুকে ধকধক করা।

৪. মাথা ঘোরা বা দুর্বল লাগা: দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হওয়া বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি।

৫. অস্বাভাবিক ক্লান্তি: সামান্য পরিশ্রম করেও যদি ক্লান্তি আসে, এমনকী বিশ্রাম নিয়েও ক্লান্তি না কাটে কিংবা রোজের কাজ করতে কষ্ট হয় তাহলে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। 

প্রতিরোধের উপায়


* নিয়মিত ব্যায়াম করুন: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা অ্যারোবিক ব্যায়াম করুন।

* সুষম খাদ্য খান: বেশি করে শাকসবজি, ফল, গোটা শস্য ও মাছ খান। নুব, চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।

* স্ট্রেস কমান: যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা গভীর শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

আরও পড়ুনঃ শরীরে আয়রনের ঘাটতি? শুধু এই শাকের সঙ্গে লেবু মিশিয়ে খান, মুহূর্তে মিলবে রক্তাল্পতার সমাধান, এনার্জি হবে দ্বিগুণ

* পর্যাপ্ত ঘুমান: হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে প্রতিদিন অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন।

* ধূমপান থেকে দূরে থাকুন: তামাক হৃদরোগের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ায়। ধূমপান সহ যে কোনও নেশা বর্জন করুন।


বিশেষজ্ঞদের মতে, মেনোপজ ও পোস্ট-মেনোপজের সময় মহিলাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত। বিশেষ করে হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা যাচাই করা জরুরি। এ সময়ে একটু সচেতন হলে বড় ধরনের বিপদ এড়ানো সম্ভব।