আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাংলাদেশের ধানমন্ডিতে ছায়ানট ভবনে হিংসাত্মক কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা জানাল শিল্প ও সংস্কৃতির পীঠস্থান শান্তিনিকেতন। এই ঘটনা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। এমনটাই জানিয়েছেন ঠাকুর পরিবারের সদস্য তথা বিশ্বভারতীর পাঠভবনের প্রাক্তন অধ্যক্ষ, আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর। ‌নিন্দা জানানোর ভাষা নেই বলেন দু’‌বার জাতীয় পুরস্কারজয়ী বিশিষ্ট রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী মোহন সিং খাঙ্গুরা। এছাড়া শান্তিনিকেতনের পাঠভবনের প্রাক্তন অধ্যাপক কিশোর ভট্টাচার্যও এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তবে ঐতিহ্যবাহী বিশ্বভারতী এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে সরকারিভাবে কোনও বিবৃতি দেয়নি। 

প্রসঙ্গত, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে ক্ষোভ ও বিক্ষোভ। পরিস্থিতি দ্রুত হিংসাত্মক রূপ নেয়। ঢাকায় একাধিক সংবাদপত্রের দপ্তরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি হামলার শিকার হয় দেশের প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট।

 

বৃহস্পতিবার রাত দেড়টা থেকে আড়াইটার মধ্যে ধানমন্ডিতে ছায়ানটের সাততলা ভবনে ৫০–৬০ জনের একটি দল হামলা চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ভবনের নিচতলা থেকে শুরু করে একে একে সব কক্ষে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। চেয়ার, টেবিল, দরজা, জানালা ভাঙার পাশাপাশি তবলা, হারমোনিয়াম, তানপুরা–সহ নানা বাদ্যযন্ত্র গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। একাধিক জায়গায় আগুন লাগানো হয়। পুড়ে যায় বই ও সঙ্গীত সামগ্রী। ছিঁড়ে ফেলা হয় ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত সনজিদা খাতুন ও লালনের ছবি। হামলার সময় নানা উস্কানিমূলক স্লোগান দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন সে দেশের সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষজন।

বাংলাদেশের পাশাপাশি এদেশেও নিন্দার ঝড় উঠেছে। শিল্প ও সংস্কৃতির পীঠস্থান বলে পরিচিত বীরভূমের শান্তিনিকেতনের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘদিন ধরেই নিবিড় সম্পর্ক। সনজিদা খাতুনের সঙ্গেও বিশ্বভারতী ও শান্তিনিকেতনের বহু মানুষের গভীর ও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল। ‌তাই ছায়ানটে বর্বরোচিত আক্রমণের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী ও আশ্রমিকরা সরব হয়েছেন। আজকাল ডট ইন–এর তরফে যোগাযোগ করা হলে এই নিয়ে মুখ খুলেছেন আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর, বিশিষ্ট রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী মোহন সিং খাঙ্গুরা ও বিশ্বভারতীর প্রাক্তন অধ্যাপক কিশোর ভট্টাচার্য। 

 

সুপ্রিয়বাবু আক্ষেপ করে বলেন, ‘‌বাংলাদেশে কতবার গিয়েছি, থেকেছি। কত মানুষের সঙ্গে পরিচয় কিন্তু বর্তমানে সে দেশে কার্যত পাগলামি চলছে!‌ কিছু ধর্মান্ধ গুণ্ডার দল বাংলাদেশ ছারখার করে দিল। সনজিদাদির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল। তাঁর বহু পরিশ্রম ও কষ্টে তৈরি ছায়ানটকে যদি এভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয় এর থেকে দুঃখের আর কিছু হয় না। দুর্ভাগ্য এই গুন্ডাদের এখন আটকাবার কোনও রাস্তা দেখতে পাচ্ছি না। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে নিয়ম–কানুন বলে কিছু নেই। কার্যত বদমাইশদের রাজত্ব চলছে। এই শিল্প–সংস্কৃতি ধ্বংস করার ফলে বাংলাদেশ আবার বর্বর জায়গায় ফিরে যাবে। কিন্তু ওরা বুঝতে পারছে না আখেরে তারা নিজেদেরই ক্ষতি করছে। নিজেদের ইতিহাসকেই ধ্বংস করে দিচ্ছে। ওদের দেশের অবস্থা দেখলে পরিচিত মানুষদের কথা ভেবে কষ্ট হয়।’‌ মোহন সিং খাঙ্গুরা বলেন, ‘‌আমি বাংলাদেশে গিয়ে যখন এক মাস ছিলাম তখন সে দেশের নানা প্রান্তে গান গেয়েছি এমনকী ছায়ানটে বসে ছায়ানট রাগ গেয়েছি। অথচ এখন যা চলছে তা শুনে স্তম্ভিত হচ্ছি। বর্তমানে যা চলছে তা পাকিস্তানকে নকল করে করা হচ্ছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন পাকিস্তান কি খুব সুখে আছে? সঙ্গীত শিল্পী হিসাবে এসব খবর দেখে আমি অত্যন্ত বিরক্ত। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা ভাবলে মন খারাপ হয়ে যায়। দিন দিন ভারতবিদ্বেষ বেড়েই চলেছে। শান্তিনিকেতনের সঙ্গে বাংলাদেশের শিল্প ও সংস্কৃতির কত নিবিড় চর্চা ছিল। সবকিছুই বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। ধর্মান্ধরা নিজেরাই নিজেদের দেশটাকেই শেষ করছে।’‌ 

একইভাবে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন কিশোরবাবু। তিনি বলেন, ‘‌বাংলাদেশের যা চলছে তা কোনো সুস্থ সংস্কৃতিবান মানুষ সমর্থন করে না। কখনো ছায়ানটের ওপর আক্রমণ, কখনও রবীন্দ্রনাথের উপর আক্রমণ, ইতিহাস এই হামলাকারীদের কখনো ক্ষমা করবে না। এর প্রতিবাদে শান্তিনিকেতনে খোয়াই সাহিত্য পত্রিকার উদ্যোগে মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছি।’‌