আজকাল ওয়েবডেস্ক: পাঞ্জাবের আমৃতসর থেকে উঠে এল দাম্পত্য বিশ্বাসভঙ্গের একটি চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, যা নতুন করে বিবাহিত জীবনে আস্থা ও দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। অভিযোগ অনুযায়ী, ১৫ বছরের বিবাহিত জীবনে দ্বিতীয়বার এক হোটেল থেকে স্ত্রীকে অন্য এক পুরুষের সঙ্গে হাতেনাতে ধরেছেন স্বামী।
অভিযুক্ত স্বামীর নাম রবি গুলাটি। তিনি জানান, তাঁর স্ত্রী হিমানির সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় ২৫ এপ্রিল ২০১০ সালে। এই ঘটনা প্রথমবার নয়। এর আগেও ২০১৮ সালে একইভাবে স্ত্রীকে এক হোটেলে অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে পাওয়া গিয়েছিল বলে দাবি করেন রবি। সে সময় বিষয়টি উভয় পরিবারের হস্তক্ষেপে মিটমাট হয়েছিল। হিমানির বাবা-মা এসে ক্ষমা চান এবং স্ত্রীও ভুল স্বীকার করেন। ছোট সন্তানদের কথা ভেবে এবং সম্পর্ক ঠিক হয়ে যাবে এই বিশ্বাসে তখন ক্ষমা করে দেন রবি।
কিন্তু চলতি ঘটনায় পরিস্থিতি গুরুতর আকার নিয়েছে। রবি গুলাটির অভিযোগ, ঘটনার দিন দুপুর ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে তাঁর স্ত্রী বাড়ি থেকে বের হন। এরপর তিনি প্রায় ১৫-২০ বার ফোন করলেও কোনও উত্তর পাননি। দীর্ঘদিন ধরেই স্ত্রীর আচরণ নিয়ে সন্দেহ ছিল বলে জানান রবি। সেই কারণেই তিনি স্ত্রীর স্কুটিতে একটি জিপিএস ট্র্যাকার বসিয়েছিলেন।
জিপিএস লোকেশন পরীক্ষা করে তিনি নিজের দোকান বন্ধ করে স্কুটির অবস্থান অনুসরণ করেন। শেষ পর্যন্ত একটি হোটেলে পৌঁছে স্ত্রীকে অন্য এক পুরুষের সঙ্গে দেখতে পান বলে তাঁর দাবি। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম 'খবর হার পাল ইন্ডিয়া'-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রবি বলেন, “আমি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সন্দেহ করছিলাম। তাই জিপিএস লাগিয়েছিলাম। আজ লোকেশন দেখে হোটেলে গিয়ে আমার স্ত্রীকে সেখানে ধরে ফেলি।”
এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিতর্ক আরও তীব্র হয়। সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা দীপিকা নারায়ণ ভরদ্বাজ এক্স-এ ভিডিওটি শেয়ার করে মন্তব্য করেন, ভবিষ্যতে স্বামী ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা পণ, গার্হস্থ্য হিংসা এবং ভরণপোষণের মামলা দায়ের হতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি আইনি ব্যবস্থার সমালোচনা করেন। তাঁর মন্তব্য ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
এদিকে রবির বাবা পারভেজ গুলাটিও অভিযোগ করেন, এই সমস্যা বহু বছর ধরে চলছিল। তাঁর দাবি, পাঁচ থেকে সাত বছর আগেও একই ধরনের ঘটনায় পারিবারিক বৈঠক বসে। এমনকি স্থানীয় এক বিধায়কের বাড়িতেও উভয় পরিবারের উপস্থিতিতে বিষয়টি মীমাংসা হয়েছিল। তখন ক্ষমা চেয়ে বিষয়টি শেষ করা হয় এবং পরিবার ভেবেছিল সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়েছে।
কিন্তু এবার ফের একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে বলে অভিযোগ। পারভেজ গুলাটি জানান, তাঁর পুত্রবধূ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি আর রবি গুলাটির সঙ্গে থাকতে চান না এবং নিজের বাপের বাড়িতে ফিরে যেতে চান। তিনি আরও দাবি করেন, যে পুরুষের সঙ্গে হোটেলে হিমানিকে দেখা গেছে, তাঁকে পরিবারের কাছে ‘ভাই’ বলে পরিচয় দেওয়া হয়েছিল। ওই ব্যক্তি নিয়মিত তাঁদের বাড়িতে যাতায়াত করতেন এবং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতেন বলেও অভিযোগ।
গুলাটি পরিবার জানায়, তাঁরা বিষয়টি নিয়ে হিমানির পরিবারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন, আলোচনায় বসতে অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে এখনও পর্যন্ত তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও সাড়া মেলেনি।
ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। আইনগতভাবে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে এবং উভয় পরিবারের মধ্যে আদৌ কোনও সমাধান সম্ভব কি না সেই প্রশ্নই এখন সবার মুখে।
