আজকাল ওয়েবডেস্কঃ ভালবাসার সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম চুম্বন। আমরা চুম্বনকে এক অনন্য মানবিক অনুভূতি হিসেবে ভেবে থাকি যা প্রেম, সান্ত্বনা বা স্নেহ অনুভূতি প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু শুধু কি মানুষই চুম্বন করতে জানে? জানলে অবাক হবেন অনেক প্রাণীই চুম্বন, আলিঙ্গনের মাধ্যমে ভালবাসা প্রকাশ করে। এমনকী ঠোঁটবিহীন প্রাণীরাও চুম্বনে লিপ্ত হয়।
বিজ্ঞানীদের একাংশ মনে করেন, চুম্বনের উৎপত্তি ‘কিস-ফিডিং’ থেকে, যেখানে মা তার সন্তানকে মুখ থেকে মুখে খাবার খাওয়াত। মানুষের কাছে খানিকটা অদ্ভুত মনে হলেও প্রাণীদের মধ্যে এটি প্রেম-স্নেহের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডলফিন থেকে শুরু করে আদরের লাভবার্ড সহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর চুম্বনের মুহূর্ত দেখা যায়। যদিও এখনও পর্যন্ত প্রাণীদের চুম্বনের আবেগিক গুরুত্ব সঠিকভাবে বোঝা যায়নি। তবে গবেষকদের একাংশের মতে, প্রাণীদের মধ্যে চুম্বন, কামড়ানো এবং ঘনিষ্ঠতার গভীর প্রভাব রয়েছে। প্রজননের জন্য একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ের ঘনিষ্ঠতা প্রয়োজন। এমনকী কিছু প্রাণী এমনও রয়েছে যাদের ঠোঁট দিয়ে চুম্বন করার ধরন একেবারে মানুষের মতোই।
আরও পড়ুনঃ গরু, ঘোড়া, সিংহ নাকি বাঁদর! ছবিতে কোন প্রাণীটি বেছে নেবেন? উত্তরই বলে দেবে আপনি কেমন ধরনের মানুষ
প্রাইমেটঃ প্রাণীজগতে আমাদের নিকটতম আত্মীয় অর্থাৎ শিম্পাঞ্জি এবং বোনোবোদের মধ্যে চুম্বন বেশ সাধারণ দৃশ্য। বিশেষ করে বোনোবোরা তাদের অত্যন্ত সামাজিক এবং স্নেহশীল স্বভাবের জন্য পরিচিত। বিজ্ঞানীরা কয়েক দশক ধরে তাদের উপর গবেষণা করে আসছেন এবং এই ঠোঁট থেকে ঠোঁট বন্ধনকে মানসিক যোগাযোগের একটি রূপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। যা মানুষের মতো ঝগড়ার পরে চুম্বন কিংবা উষ্ণ অভিবাদন হিসেবে প্রকাশ পেতে পারে।
শিম্পাঞ্জিঃ শিবাঞ্জিরাও চুম্বন করে। মা শিম্পাঞ্জিদের অনেক সময়েই মানুষের মতোই তাদের সন্তানকে লালনপালনের সময়ে চুম্বন করতে দেখা যায়। আবার দলবদ্ধভাবে চুম্বনের মাধ্যমে "আমি দুঃখিত" বা "আমি তোমাকে মিস করেছি"-এর মতো অনুভূতি শব্দহীন ভাষায় প্রকাশ করে।
লাভবার্ডসঃ নামের মতোই পাখির জগতে লাভবার্ড পাখিদের সবচেয়ে স্নেহশীল প্রাণী হিসেবে পরিচিতি রয়েছে। এক জোড়া লাভবার্ডকে আলতোভাবে ঠোঁট স্পর্শ করতে, একে অপরকে খাওয়াতে, অথবা পালক ঝাঁকাতে প্রায়ই দেখা যায়। তোতাপাখি এবং টিয়ার ক্ষেত্রেও চুম্বন দীর্ঘস্থায়ী বন্ধন তৈরিতে ভূমিকা পালন করে।

ডলফিনঃ সামাজিক ও বুদ্ধিমান ডলফিনরা অনেক সময়েই একে অপরকে হালকাভাবে স্পর্শ করে যা গবেষকরা বন্ধনের আচরণ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। যদিও এটি মানুষের কাছে পরিচিত তথাকথিত চুম্বন নয়। এর মধ্যে ব্যক্তিগত আবেগ, অনুভূতি জড়িয়ে থাকে। কখনও কখনও এটি খেলার মুহুর্তে ঘটে এবং কখনও মতবিরোধের পরে উত্তেজনা প্রশমিত করতেও কাজ করে।
হাতিঃ হাতিরা মুখ দিয়ে চুমু খায় না, তারা শুঁড় দিয়ে, মুখে-মুখে, অথবা একসঙ্গে জড়িয়ে আলতো করে একে অপরকে স্পর্শ করে। যা কেবল শুঁড়-আলিঙ্গন হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে। চিড়িয়াখানায় অনেক সময়ে ছোট হাতিদের শুঁড় দিয়ে তাদের মায়ের মুখের কাছে পৌঁছতে দেখা যায়। এটি মায়ের সঙ্গে সন্তানের বন্ধনের একটি রূপ। অনেকটা মানুষের আলিঙ্গনের মতো এটি আত্মীয়তা এবং ভালোবাসার অনুভূতি প্রকাশ করে।

মাছঃ মাছেরা বেশ রোমান্টিক প্রকৃতির হয়। বিশেষ করে পুরুষ মাছেরা একে অপরের ঠোঁটে ঠোঁট স্পর্শ করে ভালবাসা, স্নেহের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। গবেষকদের একপক্ষ ব্যাখ্যা করেছেন, কিছু মাছের কাছে চুম্বন ভালবাসার ছলে 'পাওয়ার প্লে' হতে পারে।
সরীসৃপঃ সাপেরা সব দিক থেকেই ঠান্ডা প্রকৃতির হয়। কিন্তু তাদেরও ঘনিষ্ট হওয়ার উপায় রয়েছে। প্রেমের সময় অনেক প্রজাতির সাপ মাথা এবং শরীর একসঙ্গে ঘষে, স্পর্শের মাধ্যমে সম্পর্ক তৈরি করে। চুম্বনের মতো না হলেও এটি বন্ধন, সংযোগ এবং নতুন প্রাণ সঞ্চারের একটি প্রাচীন প্রবৃত্তিকে প্রতিফলিত করে।
