আজকাল ওয়েবডেস্ক: সন্তান জন্মানোর পর থেকেই বাবা-মায়ের মনে হাজারো প্রশ্ন। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হল, সদ্যোজাতের জন্য সেরা খাবার কোনটি? এই নিয়ে নানা মুনির নানা মত, রয়েছে বহু প্রচলিত ধারণাও। অনেকেই গরুর দুধকে শিশুদের জন্য পুষ্টিকর মনে করেন। কিন্তু সদ্যোজাত শিশুর স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে, সর্বোত্তম মায়ের বুকের দুধ, এই নিয়ে কোনও দ্বিধার অবকাশ নেই। এই প্রশ্নের উত্তরে তাবড় শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একবাক্যে জানায় মায়ের দুধের কোনও বিকল্প নেই।
আরও পড়ুন: স্ত্রীর পিঠ জিভ দিয়ে চেটে দেয় পুরুষ, স্ত্রী যদি পাল্টা লেহন করে, তবেই হয় মিলন! পৃথিবীর একমাত্র জীবিত ড্রাগন এরাই
কেন মাতৃদুগ্ধই সেরা?
মায়ের দুধ বা মাতৃদুগ্ধ প্রকৃতির এমন এক আশ্চর্য সৃষ্টি, যা একটি শিশুর প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখেই তৈরি। এর উপকারিতাগুলি এক কথায় অতুলনীয়।
১। সুষম ও সম্পূর্ণ পুষ্টি: জন্মানোর পর প্রথম কয়েক দিন মায়ের স্তন থেকে যে গাঢ়, হলুদ দুধ নিঃসৃত হয়, তাকে কোলোস্ট্রাম বলে। এটি পুষ্টি এবং অ্যান্টিবডিতে ভরপুর থাকায় এটিকে শিশুর প্রথম টিকা বলা হয়। এরপর যে দুধ তৈরি হয়, তাতে শিশুর প্রয়োজনীয় ফ্যাট, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ সঠিক অনুপাতে মেশানো থাকে।
২। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: মায়ের দুধে থাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন এবং অ্যান্টিবডি, যা মায়ের শরীর থেকে সরাসরি শিশুর শরীরে প্রবেশ করে। এটি শিশুকে ডায়ারিয়া, নিউমোনিয়া, কানের সংক্রমণ এবং অন্যান্য রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। এক কথায়, এটি শিশুর জন্য একটি প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ।
৩। সহজপাচ্য: সদ্যোজাতের হজমতন্ত্র বা পাচনতন্ত্র অত্যন্ত অপরিণত থাকে। মায়ের দুধের উপাদানগুলি এমনভাবে তৈরি যে শিশু তা সহজেই হজম করতে পারে। এর ফলে গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য বা পেটের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে যায়।
৪। মস্তিষ্কের বিকাশ: মাতৃদুগ্ধে থাকা ডিএইচএ এবং এআরএ-এর মতো ফ্যাটি অ্যাসিড শিশুর মস্তিষ্ক এবং চোখের বিকাশের জন্য অপরিহার্য।
৫। মানসিক বন্ধন: স্তন্যপানের সময় মা ও শিশুর মধ্যে যে শারীরিক সংস্পর্শ হয়, তা তাদের মধ্যে এক গভীর মানসিক বন্ধন তৈরি করে, যা শিশুর সুরক্ষিত ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
গরুর দুধে কেন ‘নয়’?
অনেক সময় নানা প্রচলিত ধারণা বা অজ্ঞতার কারণে সদ্যোজাতকে গরুর দুধ খাওয়ানো হয়, যা শিশুর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে।
হজমের সমস্যা: গরুর দুধে প্রোটিনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে, বিশেষত এতে থাকা কেসিন নামক প্রোটিন শিশুর অপরিণত পাকস্থলীর পক্ষে হজম করা প্রায় অসম্ভব।
পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা: এতে থাকা অতিরিক্ত প্রোটিন এবং খনিজ পদার্থ (সোডিয়াম, পটাশিয়াম) শিশুর অপরিণত কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করে। আবার শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় আয়রন, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই-এর পরিমাণ এতে অত্যন্ত কম থাকে।
অ্যালার্জির ঝুঁকি: অনেক শিশুরই গরুর দুধের প্রোটিনে অ্যালার্জি থাকে, যা থেকে শরীরে র্যাশ, বমি বা ডায়ারিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আয়রনের অভাব: গরুর দুধে আয়রনের পরিমাণ কম থাকায় এটি রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
আরও পড়ুন: স্ত্রীর পিঠ জিভ দিয়ে চেটে দেয় পুরুষ, স্ত্রী যদি পাল্টা লেহন করে, তবেই হয় মিলন! পৃথিবীর একমাত্র জীবিত ড্রাগন এরাই
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, জন্মানোর পর প্রথম ছয় মাস শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানো উচিত। এমনকি, এই সময় জল খাওয়ানোরও প্রয়োজন নেই। ছয় মাস পর থেকে ঘরের তৈরি নরম খাবারের পাশাপাশি অন্তত দু’বছর বয়স পর্যন্ত স্তন্যপান চালিয়ে যাওয়া উচিত। এক বছর বয়সের আগে শিশুকে গরুর দুধ দেওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
সুতরাং, মায়ের দুধ কেবল একটি খাবার নয়, এটি শিশুর সম্পূর্ণ পুষ্টি, সুরক্ষা এবং মানসিক বিকাশের একটি অপরিহার্য অঙ্গ। গরুর দুধ পুষ্টিকর হলেও, তা একটি বাছুরের জন্য তৈরি, মানুষের সন্তানের জন্য নয়। এই সহজ সত্যটি মনে রাখাই প্রত্যেক নতুন বাবা-মায়ের কর্তব্য।
