আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেশের প্রান্তিক ও গ্রামীণ এলাকার মহিলাদের আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করতে নতুন পদক্ষেপ নিল ভারতীয় জীবন বিমা সংস্থা (LIC)। ‘বিমা সখী যোজনা’ নামে একটি বিশেষ প্রকল্প চালু হয়েছে, যার অধীনে নির্বাচিত মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে LIC এজেন্ট হিসাবে নিয়োগ করা হবে। সেই সঙ্গে প্রথম বছর প্রতিমাসে ৭,০০০ ভাতা দেওয়া হবে। পরবর্তী বছরে এই ভাতা কিছুটা কমে ৬,০০০ এবং তৃতীয় বছরে ৫,০০০ হবে, তবে শর্ত সাপেক্ষে। তিন বছরের জন্য ভাতা ছাড়াও মিলবে কমিশনও।
এই প্রকল্পের আওতায় মহিলারা নিজেদের এলাকায় মানুষকে বিমা সম্পর্কে সচেতন করা, পলিসি সংক্রান্ত কাজকর্মে সহায়তা করা এবং LIC-র সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পগুলো কার্যকর করতে সহায়তা করবেন। দেশের আত্মনির্ভর ভারত প্রকল্প ও ‘২০৪৭ সালের মধ্যে সবার জন্য বিমা’-র লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্যোগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের সূচনা হয়। ১৮ থেকে ৭০ বছর বয়সের যেকোনও মহিলা যিনি অন্তত মাধ্যমিক পাশ করেছেন এবং যাঁর পরিবারে কেউ LIC-র কর্মী বা এজেন্ট নন, তিনি এই প্রকল্পে আবেদন করতে পারবেন। তবে কোনও প্রাক্তন কর্মী, বিদ্যমান এজেন্ট বা সংশ্লিষ্টদের আত্মীয়রা এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত হবেন না।
আবেদনের জন্য প্রয়োজন সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজ ছবি, বয়স, ঠিকানা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র। আবেদনকারীদের ফর্ম পূরণ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা দিতে হবে LIC-র অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে কিংবা নিকটস্থ শাখা অফিসে। নির্বাচনের পরে তাঁদের প্রশিক্ষণ ও একটি ওরিয়েন্টেশন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। LIC-র মতে, এই প্রকল্প শুধু উপার্জনের সুযোগ নয়, বরং আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ ও নারীর ক্ষমতায়নের দিকেও এক বড় পদক্ষেপ। গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারাও এতে অগ্রাধিকার পাবেন। যাঁরা এখনও আবেদন করেননি, তাঁদের LIC-র নিকটবর্তী শাখা বা অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে বিস্তারিত জেনে দ্রুত আবেদন করার পরামর্শ দিচ্ছেন আধিকারিকরা।
এই প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী মহিলারা ‘বিমা সখী’ হিসেবে পরিচিত হবেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই মহিলারাই গ্রাম বা অঞ্চলে LIC-র প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবেন। তাঁদের দায়িত্ব হবে স্থানীয় মানুষের কাছে জীবন বিমার গুরুত্ব বোঝানো, বিভিন্ন বিমা পলিসি সম্পর্কে তথ্য দেওয়া এবং নতুন পলিসি গ্রহণে উৎসাহিত করা। এতে যেমন সংস্থার কাজ ছড়িয়ে পড়বে, তেমনি মহিলারাও উপার্জনের একটি নির্ভরযোগ্য পথ পাবেন। LIC জানিয়েছে, এটি একটি বেতনভিত্তিক নিয়োগ নয়, বরং সম্মানী ও কমিশনভিত্তিক একটি দায়িত্ব। অর্থাৎ ‘বিমা সখী’ হিসেবে নিযুক্ত মহিলারা LIC-এর স্থায়ী কর্মচারী হিসেবে বিবেচিত হবেন না, তবে তিন বছরের জন্য নির্দিষ্ট শর্তে মাসিক ভাতা ও কমিশন পাবেন। কমিশনের পরিমাণ বিমা বিক্রির সাফল্যের উপর নির্ভর করবে।
এছাড়াও সংস্থা জানিয়েছে, গ্রামাঞ্চলের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর (Self Help Group) সদস্যাদের এই প্রকল্পে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। তাঁরা স্থানীয় সমাজে ইতিমধ্যেই বিশ্বাসযোগ্য মুখ হওয়ায় এই ধরনের কাজে তাঁরা আরও কার্যকর হবেন বলে সংস্থার আশা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের সুযোগই নয়, বরং বহু প্রান্তিক নারী নিজ গ্রামে নেতৃত্বের ভূমিকা নিতে পারবেন, যা সামাজিক দিক থেকেও অত্যন্ত ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। LIC-র ওয়েবসাইটে প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে এবং খুব শীঘ্রই এই প্রকল্পের অধীনে আরও আবেদন গ্রহণের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পাবে বলে জানানো হয়েছে। তাই যাঁরা প্রকৃত অর্থেই নিজের পায়ে দাঁড়াতে চান, তাঁদের জন্য ‘বিমা সখী যোজনা’ হতে পারে একটি নতুন দিগন্ত।
