আজকাল ওয়েবডেস্ক: সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরের রামবান জেলায় এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার রাতে ঘটনাটি ঘটে। খবর মারফত, জেলার উখরাল পোগল পারিস্তান এলাকার সেনাবাথির কাছে একটি যাত্রীবাহী প্রাইভেট গাড়ি রাস্তা থেকে পিছলে গভীর খাদে পড়ে যায়। দুর্ঘটনার জেরে গাড়িটি প্রায় ৬০০ ফুট গভীর এক পাহাড়ি খাদে ছিটকে পড়ে। ঘটনাস্থলেই ১ জন নিহত হন। পরে আহত অবস্থায় হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার পথে আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় একজন এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনার জেরে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মাত্র বছর ২০ এর তরুণ তৌকির আহমেদের। বাকিরা- মহম্মদ রফিক (৪০),আব্দুল লতিফ (৪০), আজাজ আহমেদ (৪০)। গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করা হলেও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তাঁদের মৃত্যু হয়। এছাড়াও ইয়াওয়ার আহমেদ ও শাকিল আহমেদ নামে আরও দুই ব্যক্তি গুরুতর আহত হন। বর্তমানে তাঁরা অনন্তনাগের সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন ও উদ্ধারকারী দল রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। আহতদের উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায় তারা। দুর্ঘটনাটি কেন ঘটল, তা নিয়ে এখনও তদন্ত চলছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, খারাপ রাস্তার অবস্থা এবং চালকের আচমকা নিয়ন্ত্রণ হারানোই দুর্ঘটনার মূল কারণ।

জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এই দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, 'উখরাল-সেনাবাথি রোডে সংঘটিত মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ জন প্রাণ হারান। এই মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক। মুখ্যমন্ত্রী শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সহানুভূতি জ্ঞাপন করেছেন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন।' তিনি আরও জানান, 'আহতদের অনন্তনাগ মেডিকেল কলেজে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।  মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রাখছে যাতে প্রয়োজনীয় সমস্ত সহায়তা নিশ্চিত করা যায়।'

রামবান জেলা প্রশাসন দুর্ঘটনার পরপরই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এলিয়াস খান এক বিবৃতিতে বলেন, 'নিহতদের পরিবারকে এক লক্ষ টাকা করে এবং আহতদের ২৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন সবরকম সহায়তা প্রদান করছে।' তিনি আরও লেখেন, 'উখরাল-সেনাবাথিতে ৪ জনের প্রাণহানির ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। প্রয়াতদের আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং তাঁদের পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।'

আরও পড়ুনঃ পাটনায় ফের ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা, এক সপ্তাহে দ্বিতীয় খুনে শহরে আতঙ্ক

ঘটনার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ড: জিতেন্দ্র সিং নিজে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন ও রামবান জেলার ডেপুটি কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান,'এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমি সঙ্গে সঙ্গে ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ এলিয়াসের সঙ্গে যোগাযোগ করি। প্রয়াত তৌকির আহমেদ, আব্দুল লতিফ, মোহাম্মদ রফিক এবং আজাজ আহমদের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা ও শোক। আহত ২ জন- ইয়াওয়ার আহমেদ ও শাকিল আহমেদ কে অনন্তনাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান এমনকি প্রয়োজন হলে, ব্যক্তিগত তহবিল থেকেও সহায়তা করা হবে।

স্বাভাবিকভাবেই দুর্ঘটনার জেরে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাঁদের দাবি, পাহাড়ি রাস্তায় নিয়মিত মেরামত, নিরাপত্তা ব্যারিকেড ও গার্ডরেল বসানো জরুরি। এমন দুর্ঘটনা বহুবার ঘটেছে, কিন্তু সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের উদ্যোগ এখনও যথেষ্ট নয়। একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন,'এই সড়কে একাধিকবার দুর্ঘটনা ঘটেছে। কেবল দুর্ঘটনার পর শোক প্রকাশ করা হয়, কিন্তু প্রকৃত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।”

রামবানের এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আবারও স্মরণ করিয়ে দিল, পাহাড়ি অঞ্চলের যাতায়াত কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে উত্তরোত্তর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এমনটাই আশ্বাস দেওয়া হয়েছে৷