রান্না শুধু স্বাদ বাড়ানোর বিষয় নয়, এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে খাবারের পুষ্টিগুণ। কিন্তু জানেন কি, আমরা প্রতিদিন যেভাবে রান্না করি, তার অনেকটাই নীরবে খাবারের ভিটামিন ও খনিজ নষ্ট করে দেয়? সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কিছু রান্নার পদ্ধতি পুষ্টিগুণ ধ্বংস করে, আবার কিছু পদ্ধতি সঠিকভাবে অনুসরণ করলে খাবারের উপকারিতা অনেকটাই বজায় থাকে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিপ ফ্রাই বা অতিরিক্ত ভাজা হল পুষ্টি নষ্টের সবচেয়ে বড় কারণ। বেশি তেলে, বেশি সময় ভাজলে সবজির ভিটামিন বি ও সি প্রায় পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত তাপ তেলের গুণগত মানও খারাপ করে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই এক্ষেত্রে প্রতিদিনের খাবারে ভাজাভুজি কমানোই পুষ্টিগুণ বজায় রাখার সবচেয়ে ভাল উপায়।

অন্যদিকে, প্রেশার কুকিং নিয়ে অনেকের মনেই ভ্রান্ত ধারণা আছে। কারওর মতে, প্রেশার কুকারে রান্না করলে পুষ্টি নষ্ট হয়। বাস্তবে কিন্তু উল্টোটা। কম জল ও কম সময়ে রান্না হওয়ায় ডাল, সবজি ও শস্যের পুষ্টিগুণ অনেকটাই অক্ষত থাকে। বিশেষ করে ডাল ও প্রোটিনজাত খাবারের জন্য প্রেশার কুকিং একটি ভাল পদ্ধতি।

সেদ্ধ বা স্টিমিং পদ্ধতিও পুষ্টি রক্ষার ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর। তবে সমস্যা হয় যখন অতিরিক্ত জল ব্যবহার করা হয়। সেদ্ধ করার সময় সবজির ভিটামিন ও খনিজ অনেকটাই জলে চলে যায়। তাই কম জলে বা স্টিমারে রান্না করাই বেশি উপকারী। চাইলে সেই সেদ্ধ জল স্যুপ বা ঝোলে ব্যবহার করা যেতে পারে।

অনেক বাড়িতে খাবার বার বার গরম করা বা রিহিট করার অভ্যাস রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একাধিকবার গরম করলে খাবারের পুষ্টিগুণ দ্রুত কমে যায়। বিশেষ করে শাকসবজি ও ভাত বার বার গরম করলে ভিটামিন প্রায় নষ্ট হয়ে যায়। তাই যতটা সম্ভব একবারে রান্না করে টাটকা খাওয়াই ভাল।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, রান্নার সবজি কাটা ও সময়। সবজি খুব আগে কেটে রেখে দিলে বাতাসের সংস্পর্শে ভিটামিন নষ্ট হতে শুরু করে। তাই রান্নার ঠিক আগে সবজি কাটা সবচেয়ে ভাল অভ্যাস।

সব মিলিয়ে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, রান্নার পদ্ধতিতে সামান্য পরিবর্তন আনলেই খাবার হয়ে উঠতে পারে অনেক বেশি পুষ্টিকর। কম তেল, কম জল, কম সময় এবং বার বার গরম না করা-এই চারটি নিয়ম মেনে চললেই প্রতিদিনের খাবার হবে সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর।