আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিনের শেষে একটু নেটফ্লিক্স, ইনস্টাগ্রাম-এ স্ক্রল বা অফিসের পেন্ডিং ইমেলে চোখ বুলিয়ে নেওয়া। আধুনিক জীবনে অনেকেই রাত জেগে এসব কাজ করেন। ঘুমাতে ঘুমাতে ১টার বেশি বেজে যায়। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাসই কি নিঃশব্দে মানসিক সমস্যা ডেকে আনতে পারে? সাম্প্রতিক গবেষণা কিন্তু তেমনটাই বলছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন কলেজ এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ গবেষণায় উঠে এসেছে, রাত ১টার পর ঘুমোলে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আর এই প্রভাব অত্যন্ত স্পষ্ট। গবেষণাটি “মাইন্ড আফটার মিডনাইট হাইপোথিসিস” নামে পরিচিত। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে ফ্রন্টিয়ারস ইন নেটওয়ার্ক ফিজিওলজি নামের বিজ্ঞান-জার্নালে।

আরও পড়ুন: ২৬৪৫ লিটার স্তন্য উৎপন্ন হয় বধূর শরীরে! 'রোজ রাতে ৩ ঘণ্টা..' বিপুল দুগ্ধ উৎপাদনের রহস্য ফাঁস করলেন নিজেই

গবেষকদের বক্তব্য, আমাদের মস্তিষ্ক সারাদিনে নানা ধরনের তথ্য গ্রহণ করে। দিনের শেষে মস্তিষ্ক এই তথ্যগুলোকে ছাঁকনির মতো করে ফিল্টার করে। অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো সংরক্ষণ করে। আর এই কাজটি হয় মূলত গভীর ঘুমের সময়ে। কিন্তু যখন কেউ নিয়মিত রাত ১টা বা তার পরে ঘুমাতে যান, তখন এই প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটে। ফলে উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, নেতিবাচক চিন্তা এবং ডিপ্রেশন দেখা দেওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়।

আরও পড়ুন: ১২ জন স্ত্রী! বাচ্চা করাই নেশা! ১০২ সন্তানের বাবা হয়ে অবশেষে থামলেন ৬৮-র মুসা, কেন ক্ষান্ত দিলেন? কী বললেন এ যুগের ধৃতরাষ্ট্র?

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, রাত ১টার পরে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ দিন বা সন্ধ্যাবেলার তুলনায় অনেকটাই বদলে যায়। যেমন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে, আবেগপ্রবণতা বাড়ে এবং নেতিবাচক চিন্তাভাবনা প্রবল হয়ে ওঠে। এই কারণেই গবেষকরা বলছেন, গভীর রাতে না ঘুমিয়ে জেগে থাকাটা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
বাংলাদেশ ও ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে, যেখানে তরুণ প্রজন্মের বড় অংশই অনলাইনে কাজকর্ম করেন অথবা স্ট্রিমিং বা সোশ্যালমিডিয়ায় গভীর রাত অবধি ডুবে থাকে, সেখানে এই প্রবণতা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। ২০২৩ সালে বেঙ্গালুরুর এক বেসরকারি মানসিক স্বাস্থ্য সংস্থা ‘মাইন্ড ক্লিনিক’ একটি সমীক্ষা চালায়। সমীক্ষায় দেখা যায় ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সিদের ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশ মানুষ রাত ১টার পর ঘুমাতে যান। এবং এদের মধ্যে ৪৮ শতাংশই উদ্বেগ ও অনিদ্রা সংক্রান্ত সমস্যার শিকার।
চিকিৎসকদের মতে, শরীরের সার্কাডিয়ান রিদম বা জৈবিক ঘড়ির সঙ্গে যখন ঘুমের সময় অমিল হয়, তখন কর্টিসল ও মেলাটোনিনের মতো হরমোনের স্বাভাবিক নিঃসরণেও গোলযোগ দেখা দেয়। এর ফলে অসময়ে ঘুম ভেঙে যাওয়া, দুশ্চিন্তা, অনিদ্রা, একাকিত্ব ও ডিপ্রেশন দেখা দেয়।
সমাধান? চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোনো অভ্যাস করতে হবে। স্ক্রিন টাইম কমাতে হবে। বিশেষ করে রাত ১০টার পর মোবাইল ব্যবহার নৈব নৈব চ। ঘুমাতে যাওয়ার আগে ধ্যান, হালকা বই পড়া বা শান্ত সঙ্গীত শোনা সহায়ক হতে পারে। প্রয়োজনে মনোবিদ বা সাইকোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
অতএব, সময় থাকতে অভ্যেস বদলান, নয়তো রাত জাগাই একদিন ডেকে আনবে বড় বিপদ।