আজকাল ওয়েবডেস্ক: অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে ভারতের উচ্চ-প্রভাবসম্পন্ন ও স্বল্পমেয়াদি সামরিক অপারেশনাল সক্ষমতা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। বুধবার নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত এয়ার ফোর্স কমান্ডার্স কনক্লেভে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি ভারতীয় বায়ুসেনা (আইএএফ)-কে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত, অপারেশনালভাবে চৌকস ও ভবিষ্যতমুখী বাহিনী হিসেবে অভিহিত করেন।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, "অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিগুলিতে ভারতীয় বায়ুসেনার সাহসিকতা, গতি ও নিখুঁত আঘাত দেশের সামরিক সক্ষমতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।" একইসঙ্গে তিনি হামলার পর পাকিস্তানের 'দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রতিক্রিয়া' এবং ভারতীয় সেনার দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্যও আইএএফ-অর্থাৎ ভারতীয় বায়ুসেনা বাহিনীর প্রশংসা করেন।

সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থার কথা তুলে ধরে রাজনাথ সিং বলেন, "শত্রুপক্ষের সম্ভাব্য হামলার সময়েও দেশের মানুষ শান্ত ছিল এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন অব্যাহত রেখেছে।" তাঁর কথায়, এই আচরণই প্রমাণ করে যে দেশের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির ওপর জনগণের পূর্ণ আস্থা রয়েছে, বিশেষ করে ভারতীয় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর।

যুদ্ধের পরিবর্তিত চরিত্র নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, "রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত, ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধ, বালাকোট এয়ার স্ট্রাইক এবং অপারেশন সিঁদুর—এই সবকিছুই দেখিয়ে দিয়েছে যে আধুনিক যুদ্ধে আকাশশক্তি একটি নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করছে।" তিনি জোর দিয়ে বলেন, "আকাশশক্তি কেবল কৌশলগত নয়, বরং এটি একটি শক্তিশালী কৌশলগত উপকরণ, যার মূল বৈশিষ্ট্য হল গতি, চমক ও নির্ভুলতা।"

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আরও বলেন, "একুশ শতকের যুদ্ধ কেবল অস্ত্রনির্ভর নয়; এটি প্রযুক্তি, ধারণা ও ক্ষমতার লড়াই। সাইবার যুদ্ধ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মানববিহীন আকাশযান, উপগ্রহভিত্তিক নজরদারি ও মহাকাশ-নির্ভর সক্ষমতা ভবিষ্যতের যুদ্ধের রূপরেখা বদলে দিচ্ছে।" আধুনিক সংঘর্ষে সাফল্যের জন্য নির্ভুল অস্ত্র, রিয়েল-টাইম গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানান রাজনাথ সিং। তিনি আশা প্রকাশ করেন, চলতি বছর স্বাধীনতা দিবসে ঘোষিত ‘সুদর্শন চক্র’ ভবিষ্যতে জাতীয় সম্পদ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি, দেশীয় জেট ইঞ্জিন উন্নয়নকে একটি জাতীয় মিশন হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথাও তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন।

প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতা বাড়াতে সরকার বেসরকারি খাত, স্টার্ট-আপ ও এমএসএমই-গুলির সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করছে বলেও জানান রাজনাথ সিং। iDEX ও ADITI-এর মতো উদ্যোগের মাধ্যমে তরুণদের প্রতিরক্ষা উৎপাদনে যুক্ত করা হচ্ছে। ২০২৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত iDEX-এর আওতায় দেওয়া ৫৬৫টি চ্যালেঞ্জের বিপরীতে ৬৭২ জন বিজয়ী নির্বাচিত হওয়াকে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে তরুণদের বাড়তে থাকা আগ্রহের প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

অপারেশন সিঁদুরকে ত্রি-সেনা সমন্বয়ের এক উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, "বর্তমান পরিস্থিতিতে তিন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় আরও জোরদার করা অত্যন্ত জরুরি। এতে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে এবং প্রতিপক্ষকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।"
এছাড়াও দেশ ও বিদেশে ভারতীয় বায়ুসেনার মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ মোকাবিলা কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। তাঁর মতে, প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ভারতীয় বায়ুসেনা-র এই ভূমিকা দেশের মানুষের মধ্যে আকাশযোদ্ধাদের প্রতি আস্থা আরও বাড়িয়েছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ছাড়াও এই কনক্লেভে উপস্থিত ছিলেন চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান-সহ ভারতীয় বায়ুসেনার শীর্ষ আধিকারিকরা। সম্মেলনে আইএএফ-এর অপারেশনাল প্রস্তুতি, ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতা জোরদার করার রূপরেখা নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে।