আজকাল ওয়েবডেস্ক: মাতৃদুগ্ধ নবজাতকের কাছে অমৃতসম। জীবনের প্রথম মুহূর্তগুলি অতিবাহিত করার সময় মায়ের বুকের দুধই শিশুর সুষম আহারের সবচেয়ে বড় উৎস। অথচ এবার সেই স্তনদুগ্ধতেই মিলল এমন কিছু ধাতু যা মানবশরীরের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর।

সম্প্রতি বিহারের পাটনার মহাবীর ক্যানসার সংস্থান অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের পক্ষ থেকে একটি গবেষণা করা হয় স্তনদুগ্ধের উপর। আর তাতেই দেখা যায় মায়ের দুধই উচ্চমাত্রায় রয়েছে সীসার মতো ক্ষতিকর ধাতু। বিহারের মোট ছয়টি জেলায় এই ঘটনা লক্ষ করা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। এই একই গবেষকদল কিছুদিন আগেই পৃথক একটি পরীক্ষায় জানিয়েছিলেন, বিহারের কিছু জায়গার মহিলাদের মাতৃদুগ্ধে আর্সেনিকের মতো ক্ষতিকর ধাতু পাওয়া যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: রোগীদের উপুড় করে নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাস খুলে নিতেন! তারপর…? বিস্ফোরক অভিযোগ নামী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে
আরও পড়ুন: ‘স্তনদুগ্ধ আইসক্রিম’ খেতে হুড়োহুড়ি বড়দেরও! কত দাম? কোথায় পাওয়া যাবে এই স্বাদ?
গবেষকরা জানাচ্ছেন মাতৃদুগ্ধ থেকে সীসা বা লেড নবজাতকের শরীরে গেলে তার প্রভাব হতে পারে মারাত্মক। নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে শিশুর বুদ্ধির বিকাশে, দেখা দিতে পারে অন্যান্য রোগও। জন্মের সময় ওজন কম থাকা, মস্তিষ্ক, হাড় এবং পেশির গঠনে সমস্যা হওয়ার মতো একাধিক রোগ দেখা দিতে পারে শিশুর, মত বিশেষজ্ঞদের। গবেষক অভিনব শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, বিহারের সমস্তিপুর, দারভাঙ্গা, বেগুসরাই, খাগারিয়া, মুঙ্গের এবং নালন্দা জেলা থেকে প্রাপ্ত নমুনা পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে প্রায় ৯২ শতাংশ মাতৃদুগ্ধের মধ্যেই রয়েছে সীসা। এর মধ্যে একটি নমুনায় সর্বোচ্চ ১৩০৯ মাইক্রোগ্রাম সীসা মিলেছে প্রতি লিটার দুধে।
গবেষক দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য অশোক কুমার ঘোষ জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে তাঁরা গঙ্গানদীর তীরবর্তী অঞ্চলের ৩২৭ জন মহিলার নমুনা সংগ্রহ করেন। এই নারীদের সকলেরই বয়স ছিল ১৭ থেকে ৪০ এর মধ্যে। প্রাথমিক ভাবে নতুন মায়েদের মধ্যে আর্সেনিকের পরিমাণ যাচাই করাই ছিল তাঁদের উদ্দেশ্য। কিন্তু তাঁরা এর পাশাপাশি লেড বা সীসা পরীক্ষা করারও সিদ্ধান্ত নেন। আর তাতেই উঠে আসে এই ভয়ঙ্কর তথ্য। শুধু দুধ নয়, নতুন মায়েদের রক্তেও মিলছে এই ধাতু। প্রায় ৮৭ শতাংশ মহিলার দেহে এই ধাতুর পরিমাণ গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি।

কিন্তু কেন ঘটছে এমন ঘটনা? বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন উত্তর খুঁজতে এখনও আরও গবেষণা দরকার। তবে প্রাথমিক ভাবে বলা যায় সম্ভবত এই সব অঞ্চলের মাটিতে এই ধাতুগুলোর পরিমাণ বেশি, ফলে ভূগর্ভস্থ জলে মিশছে বিষাক্ত ধাতু পাশাপশি ওই অঞ্চলে চাষ করা সবজিতে যে কীটনাশক ব্যবহার করা হয় তার থেকে খাবারের মাধ্যমেও শরীরে ঢুকতে পারে সীসা। এছাড়া কিছু আয়ুর্বেদিক ওষুধ, রং মেশানো হলুদ, প্রসাধন সামগ্রী থেকেও দেহে এই সব ক্ষতিকর ধাতু ঢুকতে পারে বলে সতর্ক করেছেন গবেষকরা।