মিল্টন সেন: চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর বিসর্জন মানেই এক অনন্য ঐতিহ্য। রাজ্যজুড়ে খ্যাতি রয়েছে এই শোভাযাত্রার। প্রতিবছরই বিসর্জনে থাকে নতুনত্ব, আর দর্শনার্থীর ঢল নামে গঙ্গার ঘাটে।

নিয়ম অনুযায়ী, দশমীর সন্ধ্যায় শুরু হয় প্রধান বিসর্জন শোভাযাত্রা। তবে তার আগেই সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন মণ্ডপের প্রতিমাগুলির বিসর্জন শুরু হয়ে যায়। সিঁদুর খেলা, প্রতিমা বরণ আর গান-বাজনা শেষে প্রতিমা পৌঁছায় গঙ্গার ঘাটে।

চন্দননগর রেলস্টেশনের পশ্চিমদিকে একাধিক বারোয়ারি পুজো হয়। যেহেতু গঙ্গা রয়েছে পূর্বদিকে, তাই পশ্চিমের প্রতিমাগুলি বিসর্জনে নিয়ে যেতে হয় রেললাইন পেরিয়ে।

বিশালাকার প্রতিমা হওয়ায় সাবওয়ে দিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই প্রতিবছরই কিছু প্রতিমাকে রেললাইন ধরে নিয়ে যাওয়া হয় পূর্ব পাড়ে। শনিবার দুপুরে এমনই এক বিরল দৃশ্য দেখা গেল চন্দননগর স্টেশনে।

৪২ বছর ধরে পুজো করা সুভাষপল্লি উত্তরপাড়া বারোয়ারি কমিটির সদস্যরা বাঁশের খাঁচায় দড়ি বেঁধে প্রতিমাকে কাঁধে তুলে রেললাইন পেরিয়ে নিয়ে যান গঙ্গার দিকে।

এ সময় নিরাপত্তার স্বার্থে হাওড়া-বর্ধমান মেন লাইন কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ রাখা হয়। বন্ধ করা হয় ওভারহেড তারে বিদ্যুৎ চলাচলও। এই সময়ে প্রতিমা রেললাইন পার করছে দেখতে ভিড় জমে যায় স্টেশন চত্বরে।

ট্রেন থেকে যাত্রীরাও মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি করেন সেই দৃশ্য। কেউ কেউ আবার দূর থেকেই প্রণাম সেরে নেন দেবীকে। শ্যাওড়াফুলি জিআরপি থানার ওসি প্রদ্যুৎ ঘোষ নিজে উপস্থিত থেকে হ্যান্ড মাইক হাতে জনতাকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ দেন।

পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, এই অভিনব বিসর্জন পদ্ধতি দেখতে চন্দননগরে তৈরি হয় উৎসবের আবহ। চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী বিসর্জনের এই দৃশ্য আবারও প্রমাণ করল — ঐতিহ্য, ভক্তি আর শৃঙ্খলা মিলেই চন্দননগরের পুজো এক অনন্য উৎসব।