আজকাল ওয়েবডেস্ক: ওঁদের দেখলে গাড়ির কাচ উঠিয়ে দেওয়া অভ্যাস। কখনও বা মুখ ঘুরিয়ে এমন ভাব করা, যেন পড়েননি তাঁরা চোখে। মুখে বুজে হাসি ঠাট্টাও চলে ওদের দেখলে। কিন্তু প্রকৃতির কী লীলা! যখন দীর্ঘদিনের মনোবাসনা পূর্ণ হয়, তখন পূর্ণিমার চাঁদের মতোই ওঁদের কথা মনে পড়ে। ওঁরা সমাজে বাড়তি, ওঁরা কিন্নর, কথ্য ভাষায় হিজড়া। শুনলে অবাক হবেন, ছটপুজোর দিনটায় ভীষণ ব্যস্ততা থাকে রাজ্য বা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী কিন্নর সমাজে। তৃতীয় লিঙ্গের অংশ বা সাধারণভাবে যাঁরা 'হিজড়া' বলে পরিচিত। মনোস্কামনা পূর্ণ হলে এই পুজোয় যাঁদের নাচের বরাত দেওয়া হয়। ফলে বহু ছট পুজোর ভাসানে দেখা যায় শোভাযাত্রায় নাচতে নাচতে যাচ্ছেন তাঁরা। 

বিষয়টা কিন্তু এরকম নয় যে হঠাৎ করে মনে হল আর কেউ গিয়ে কিন্নর সমাজের কাছে গিয়ে অনুরোধ করলেন নাচার জন্য। আর তাঁরা এসে নাচতে লাগলেন। অনেক আগেই এই নাচের বায়না করে আসতে হয়। পূর্ব বর্ধমানের পাঞ্জাবি পাড়ার বাসিন্দা এবং জেলার কিন্নর সমাজের 'গুরু মা' পলি সাহা বলেন, 'অনেক পরিবার আছে যারা দীর্ঘদিন ধরে সন্তানহীন থাকেন। তাঁরা ছট মায়ের কাছে মানত করেন যদি তাঁদের সন্তান হয় তবে কিন্নর বা হিজড়া নাচ করাবেন। তাঁদের যখন মনোস্কামনা পূর্ণ হয় তখন তাঁরা আমাদের কাছে এসে বায়না করে যান। এছাড়াও কঠিন অসুখে ভুগছেন এমন কোনও ব্যক্তি বা পরিবারও মানত করেন রোগমুক্তি হলে তাঁরা এই নাচের ব্যবস্থা করাবেন। সেই হিসেবেও আমাদের নাচতে যেতে হয়। আবার কখনও পরিচিত কারওর পুজোর ভাসানে এমনিই আমরা আনন্দ করে নাচতে যাই।' 

এটা কি শুধু পশ্চিমবঙ্গেই হয়? পলি সাহা জানিয়েছেন, 'বাংলা ছাড়াও বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই প্রথা চালু আছে। ফলে এই দিনটি আমাদের খুবই ব্যস্ততার মধ্যে কাটে।' তবে এই নাচের জন্য কিন্নর সমাজে কোনও নির্দিষ্ট অর্থের পরিমাণ চালু থাকে না। পলি সাহার দাবি, 'আমরা কখনও কাউকে কিছু জোর করি না। যে যেরকম পারে সে সেরকম দেয়।' 

তাঁর কথায়, রীতিমতো সেজেগুজেই কিন্নররা এ দিন নাচতে যান। কেউ কেউ নিজেই সাজেন আবার কেউ চলে যান বিউটি পার্লারে। শাড়িটাও একটু ভাল পড়তে হয়। ফলে সবকিছু হিসাব করেই যাঁরা বায়না করেন, তাঁরা টাকাটা দেন।' তাঁর কথায়, এই প্রথা এমন নয় যে হঠাৎ করে লোকেরা কিন্নরদের নাচের জন্য ভাড়া করছেন। বহু বছর ধরেই এই প্রথা চালু আছে।