আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরে একটি নাইটক্লাবে ভয়াবহ শ্লীলতাহানি ও নৃশংস হামলার অভিযোগ ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এক মহিলা অভিযোগ করেছেন, একটি নাইটক্লাবের মালিক ও কর্মীরা তাঁকে যৌন হেনস্তা করেন এবং তাঁর স্বামী বাধা দিতে গেলে লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। এই হামলায় স্বামীর পা দু’টি জায়গায় ভেঙে যায় বলে অভিযোগ।

ঘটনাটি ঘটেছে গত ১০ ডিসেম্বর গভীর রাতে, জয়পুরের অশোক নগর থানার আওতাধীন ক্লাব আলফা (Club Alpha)-তে। এই ঘটনায় অশোক নগর থানায় একটি এফআইআর দায়ের হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযোগকারিণী ইরাম শেখ, যিনি জয়পুরের ঝোটওয়ারা এলাকার বাসিন্দা। এফআইআরে তিনি জানিয়েছেন, ১০ ডিসেম্বর রাতে তিনি তাঁর স্বামী নাভেদ উসমানি-র সঙ্গে ক্লাব আলফায় যান। ক্লাবে ঢোকার পর দু’জনকে রেস্তরাঁ অংশের একটি টেবিলে বসানো হয়।

অভিযোগ অনুযায়ী, তাঁরা বসে থাকার সময় এক ওয়েটার তাঁদের টেবিলে এসে একটি কাগজ দেন, যেখানে একটি মোবাইল নম্বর লেখা ছিল। ওয়েটার নাকি ইরাম শেখকে জানান, ওই নম্বরটি ক্লাবের মালিক ভারত ট্যাঙ্ক-এর এবং তিনি তাঁকে একটি ব্যক্তিগত ঘরে গিয়ে দেখা করতে চান।
এই প্রস্তাব স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেন ইরাম শেখ।

এফআইআরে আরও বলা হয়েছে, কিছুক্ষণ পর তিনি ক্লাবের ভেতরে ওয়াশরুমের দিকে যান। সেই সময় পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয় বলে অভিযোগ। ইরাম শেখের দাবি, ওয়াশরুমের কাছে তাঁকে ঘিরে ধরেন ক্লাবের মালিক ভারত ট্যাঙ্ক, ম্যানেজার দীপক এবং কয়েকজন বাউন্সার। তাঁরা অশালীন আচরণ শুরু করেন এবং তাঁকে শ্লীলতাহানি করা হয়।

অভিযোগকারিণীর বক্তব্য অনুযায়ী, আগেই ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে অস্বীকার করা সত্ত্বেও তাঁকে বারবার হেনস্তা করা হয়। এই পরিস্থিতিতে তিনি চিৎকার করে সাহায্য চাইলে তাঁর স্বামী নাভেদ উসমানি ছুটে আসেন এবং মালিক ও কর্মীদের আচরণের প্রতিবাদ করেন। তখনই পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ।

এফআইআরে বলা হয়েছে, ক্লাবের মালিক ভারত ট্যাঙ্ক, ম্যানেজার দীপক এবং বাউন্সাররা একজোট হয়ে নাভেদ উসমানির উপর হামলা চালান। অভিযোগ অনুযায়ী, তাঁকে লোহার রড দিয়ে মারধর করা হয় এবং নির্মমভাবে প্রহার করা হয়। হামলায় তাঁর পা দু’টি জায়গায় ভেঙে যায়।

শুধু শারীরিক হামলাই নয়, অভিযোগকারিণী জানিয়েছেন, অভিযুক্ত বাউন্সাররা তাঁদের গাড়িতেও ভাঙচুর চালায়।

ঘটনার পরপরই পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ফোন করে বিষয়টি জানানো হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় নাভেদ উসমানিকে এসএমএস হাসপাতাল-এ ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেছেন যে মারধরের ফলে তাঁর পায়ে দু’টি স্থানে ফ্র্যাকচার হয়েছে।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে অশোক নগরের এসিপি বলরাম চৌধুরী জানান, ১০ ডিসেম্বর গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটে এবং থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশ ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে।

এসিপি চৌধুরীর কথায়, “ঘটনার সময়কার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। অভিযুক্তদের কল ডিটেইল রেকর্ড ও লোকেশন ট্র্যাক করা হচ্ছে। ভুক্তভোগী পক্ষের বয়ান নেওয়া হয়েছে। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

পুলিশ জানিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রযুক্তিগত তথ্যসহ অন্যান্য প্রমাণ খতিয়ে দেখে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ করা হবে। এই ঘটনার পর জয়পুরে নাইটক্লাবগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও মহিলাদের সুরক্ষা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।