অতীশ সেন, ডুয়ার্স: দিন পেরিয়ে রাত হয়ে গেলেও মৃত শাবকের দেহ ছেড়ে জঙ্গলে যেতে নারাজ শাবক হারা মা হাতি। মৃত সন্তানের দেহ আগলে সারাদিন চা বাগানেই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকল মা হাতি। দেহটি উদ্ধার করার চেষ্টা করতে গিয়ে হাতির হামলা থেকে কোনও ক্রমে প্রাণে বাঁচলেন বনকর্মীরা। মৃত শাবকের দেহ সমাধীস্থ করার চেষ্টাও করল সদ্যোজাত সন্তান হারা মা হাতি। ঘটনাটি ঘটেছে জলপাইগুড়ি জেলার বানারহাট ব্লকের কারবালা চা বাগানের ১৫ নম্বর ব্লকের ১২৫ নম্বর সেকশানে।
শনিবার বেশ কয়েকবার দেখা গেল- হাতিটি মৃতদেহটির কাছে গিয়ে মাথা নিচু করে শাবকটিকে তোলার চেষ্টা করছে, এর পর সে জঙ্গলের দিকে রওনা দিচ্ছে। সে হয় তো ভাবছে গুটিগুটি পায়ে সদ্যোজাত শাবক অন্য দিনের মতোই এদিনও তার পিছু নেবে। খানিকটা এগিয়ে পেছন ফিরে শাবককে দেখতে না পেয়ে সে আবার মৃতদেহের কাছে ছুটে চলে আসছে। চা বাগানের নিকাশি নালায় উল্টো হয়ে আটকে থাকা শাবকটির কাছে গিয়ে বারবার বোঝার চেষ্টা করছে তার দেহে প্রাণ অবশিষ্ট রয়েছে কি না। সন্ধ্যা নাগাদ মা হাতিটি শাবকের মৃতদেহটি টেনে তুলতেও সক্ষম হয়। রাস্তার উপর সেই দেহটি রেখে হাতিটি চেষ্টা করছিল বাচ্চাটিকে দাঁড় করাতে। ঘটনাস্থলের কাছেই সারাদিন দলের অন্যান্য হাতিগুলিও দাঁড়িয়ে রইল। সন্তান হারানো মায়ের এমন যন্ত্রনার দৃশ্যই সারাদিন দেখা গেল কারবালা চা বাগানে।
বনকর্মীরা হাতিটিকে তাড়িয়ে মৃতদেহটি উদ্ধারের চেষ্টা চালানোর সময় বনদপ্তরের একটি গাড়ির উপরেও মা হাতিটি হামলা চালায়। বানারহাট রেঞ্জের রেঞ্জার পৌলমী দে সহ গাড়িতে থাকা আরও ৫ বনকর্মী পালিয়ে কোনও ক্রমে প্রাণ বাঁচান। ক্ষিপ্ত হাতিটি গাড়িটিকে ধাক্কা দিয়ে চা বাগানের মাঝে ঢুকিয়ে দেয়। আশেপাশে মানুষ দেখলেই তাঁদের দিকে তেড়ে যাচ্ছিল হাতিটি। সন্তান হারানোর শোকের কারণেই হাতিটি এমন আচরণ করছে বলে জানা গিয়েছে।
কোনও হস্তিশাবকের মৃত্যু হলে তার দেহ সমাধীস্থ করার প্রবণতা হাতিদের মধ্যে দেখা যায়। পাশাপাশি দলের মৃত সদস্যের দেহ ফেলে হাতিরা সাধারণত চলে যেতে চায় না। তারা মাথায় মাথা ঠেকিয়ে মৃতদেহকে ঘিরে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে শোকপালন করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনও হাতির মৃত্যু হলে সেখানে প্রচুর মানুষ পৌঁছে যায়। বনকর্মীরাও মৃতদেহ উদ্ধার করে শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করেন। হাতির দল তাদের মৃত সদস্যের দেহ দীর্ঘ সময় নাগালে না পাওয়ার ফলে তাদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তির প্রকাশ - 'শোকপালন'-এর এমন দৃশ্য এখন সাধারণত দেখা যায় না। তবে শনিবার দেহ উদ্ধার করা সম্ভব না হলে এমন হৃদয়বিদারক বিরল দৃশ্য আবারও দেখা গেল।
বনদপ্তরের বিন্নাগুড়ি ওয়াইল্ড লাইফ স্কোয়ার্ডের রেঞ্জার হিমাদ্রি দেবনাথ জানান, বনকর্মীরা সন্ধ্যা পর্যন্ত হাতিটির গতিবিধি নজর রাখেন। হাতিটি মৃত শাবকের দেহ ছেড়ে দূরে না যাওয়ায় এবং আক্রমনাত্মক মেজাজে থাকায় দেহটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বনকর্মীরা রাতেও ওই এলাকায় পাহারায় থাকবেন। রবিবার পরিস্থিতি বুঝে দেহটি উদ্ধার করার চেষ্টা করা হবে।
