মিল্টন সেন: একাধিক চমকে পরিপূর্ণ থাকছে আলোর শহরে জগদ্ধাত্রী পুজো। মণ্ডপ, আলো, প্রতিমা থেকে শুরু করে প্রতিমার সাজ সবেতেই থাকবে চমক। পুজোর দিনও বাড়ছে। একইসঙ্গে বেড়েছে পুজোর সংখ্যাও। শুক্রবার চন্দননগর সেন্ট্রাল জগদ্ধাত্রী পুজো তরফে আয়োজিত এক সাংবাদিক বৈঠকে এই তথ্য জানিয়েছেন কমিটির চেয়ারম্যান নিমাই চন্দ্র দাস। উপস্থিত ছিলেন কমিটির সভাপতি শ্যামল কুমার ঘোষ,সম্পাদক শুভজিৎ সাউ, যুগ্ম সম্পাদক অমিত পাল ও দেবব্রত বিশ্বাস, কার্যকরী সভাপতি জয়দীপ ভট্টাচার্য, ওমপ্রকাশ চৌধুরী, মানব দাস প্রমুখ। আগামী ২৭ শে অক্টোবর ষষ্ঠী থেকে শুরু হচ্ছে জগদ্ধাত্রী আরাধনা। ১লা নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে জগদ্ধাত্রী শোভাযাত্রা। চন্দননগর, মানকুণ্ডু এবং ভদ্রেশ্বর মিলিয়ে গত বছর চন্দননগর কেন্দ্রীয় কমিটির অধীনে পুজো কমিটির সংখ্যা ছিল ১৭৭ টি। এবছর আরও ৩টি বারোয়ারি নতুন সংযোজন হয়ে পুজো কমিটির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮০ টি। চন্দননগর থানা এলাকায় রয়েছে ১৩৩ টি এবং ভদ্রেশ্বর থানা এলাকায় রয়েছে ৪৭ টি পুজো। এর মধ্যে ১০ টি বারোয়ারির জয়ন্তী বর্ষের পুজো রয়েছে। এবং প্রাক জয়ন্তী বর্ষের পুজো রয়েছে ১১ টি বারোয়ারির। শোভাযাত্রাতেও প্রতি বছরের মত এবছর থাকবে নতুন নতুন চমক। এবছর মোট ৭০ টি পুজো কমিটি অংশগ্রহন করবে জগদ্ধাত্রী শোভাযাত্রায়। মোট লরির সংখ্যা থাকছে ২৪৫ টি। চন্দননগর থানা এলাকার ৫৬ টি পুজো কমিটি এবং ভদ্রেশ্বর থানা এলাকার ১৪ টি পুজো কমিটি অংশগ্রহন করবে এই শোভাযাত্রায়। জগদ্ধাত্রী প্রতিমা নিরঞ্জন হবে রানী ঘাট সহ চন্দননগর ও ভদ্রেশ্বরের মোট ১৪ টি গঙ্গার ঘাটে।

এদিন কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শুভজিৎ সাউ বলেন,চন্দন নগরের ঐতিহ্য মেনে বিসর্জনের শোভাযাত্রায় ডিজে বক্স বাজানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্লাস্টিকের ব্যবহারও সম্পূর্ণই নিষিদ্ধ করা হয়েছে।প্রতিটি পুজো কমিটি প্রতিমার গাড়িতে অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডার রাখা বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি পুজো কমিটি মণ্ডপের ভিতরে টিভি ক্যামেরা রাখবে। দূষণ নিয়ন্ত্রণে কথা মাথায় রেখে প্রতিমায় সিসা মুক্ত রং ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আগাম সতর্কতা হিসেবে নোংরা আবর্জনা ফেলার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি থাকছে। প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় কোনও রকম আতশবাজি পোড়ানো যাবে না। শোভাযাত্রায় যে সমস্ত গাড়ি অংশ নেয় সেই গাড়ির চালকের সামনে আগে ইলেকট্রিক বোর্ড থাকত। যার ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকতো। এবার নিয়ম করে দেওয়া হয়েছে চালকের সামনে ফাঁকা রাখতে হবে।
চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর শোভাযাত্রা শুরু হয়েছিল ৭০ বছর আগে। সাতটি পুজো কমিটি নিয়ে এই যাত্রা শুরু করেছিল কেন্দ্রীয় কমিটি। কেন্দ্রীয় কমিটির নিয়ন্ত্রণাধীন পুজোর সংখ্যা এ বছর দাঁড়িয়েছে ১৮০ টিতে। শুভজিৎ বাবু আরও জানিয়েছেন, পুজো হোক বা বিসর্জনের শোভাযাত্রা কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশ না মানলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিখ্যাত জগদ্ধাত্রী পুজো উপভোগ করতে দূরদূরান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ চন্দননগরে আসেন। তাঁদের জন্য বায়ো টয়লেটের ব্যবস্থা থাকছে। নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সব জায়গায় রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত আলো এবং কড়া পুলিশি ব্যবস্থা। শোভাযাত্রার রুটকে চারটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। যেখানে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা থাকবেন। একটা সময় ছিল চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো সপ্তমী থেকে দশমী চার দিন হত। দর্শনার্থীরাই চার দিনের মধ্যে তিন দিন প্রতিমা দর্শন করতেন। আলোকসজ্জা দেখতে আসতেন দশমীর দিন শোভাযাত্রায়। বিগত কয়েক বছর ধরে প্রতিমা দর্শন মণ্ডপ এবং আলোকসজ্জা দেখার জন্য পঞ্চমী থেকেই ঢল নামে চন্দননগরের রাজপথে। কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী শোভাযাত্রা উপ সমিতির চেয়ারম্যান মানব দাস জানান,দুটি পঞ্জিকার মত অনুসারে এবারে জগদ্ধাত্রী পুজোর বিসর্জন শোভাযাত্রা ১ নভেম্বর হবে। পরদিনও চলবে বিসর্জন পর্ব। নিয়ম অনুযায়ী চন্দননগরের চার দিনের জগদ্ধাত্রী পূজা হয় ও প্রতিমা বিসর্জন হয় দশমীর দিন। কিন্তু এবারে সেটা একদিন বেড়ে পাঁচ দিন হয়েছে। সাংবাদিক বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয় পুজো গাইড ম্যাপ।
ছবি পার্থ রাহা।
