আজকাল ওয়েবডেস্ক: অবশেষে ভারত–আমেরিকা বাণিজ্যযুদ্ধে খানিকটা নরম সুর শোনা যাচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি আলোচনা স্থগিত করে দিলেন এবং মোটা অঙ্কের শুল্ক চাপালেন। কিন্তু সেই কড়াকড়ি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। এবার ওয়াশিংটনের একটি দল দিল্লিতে এসে ফের আলোচনা শুরু করেছে, হাতে নিয়েছে কিছু ছাড়ও।
এইবার মার্কিন দল আর ভারতের কৃষি ও দুগ্ধবাজারে অবারিত প্রবেশাধিকার চাইছে না। বরং তারা চাইছে ভারত যেন আমেরিকান চিজ কিনে নেয় এবং ভুট্টা আমদানি করে। ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারোর সাম্প্রতিক বক্তব্যের বিপরীতে এই অবস্থান অনেকটাই নরম যেখানে নাভারো বলেছিলেন ভারত অবশেষে আলোচনার টেবিলে এসেছে। বাস্তবে মনে হচ্ছে পরিস্থিতি উল্টো, কারণ শুল্কযুদ্ধে আমেরিকাই নিজেকে বিপদে ফেলেছে।
মঙ্গলবার প্রথমবার মুখোমুখি বৈঠকে বসে দুই দেশ। গত মাসে আমেরিকা ভারতের রফতানিপণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক বসানোর পর এটাই প্রথম বৈঠক। তার আগেই ট্রাম্প হঠাৎ সুর পাল্টে বলেছিলেন, তাঁর টিম ভারতের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আশ্চর্যের বিষয়, তিনি রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের তেল কেনা নিয়ে কোনও মন্তব্যই করেননি।
আরও পড়ুন: এটিএম থেকে টাকা তুলতে গিয়ে আটকে গেল? ঘাবড়ে না গিয়ে কী করবেন দেখে নিন এখনই
ভারতের জন্য সবসময় বিপদ ছিল দুগ্ধবাজার ও কৃষিখাত। এক্ষেত্রেই মার্কিন অবস্থান পাল্টেছে। এক শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বাজারে দুধ বা দই বিক্রি করতে আসেনি, বরং প্রিমিয়াম মানের চিজ যেমন ব্লু ভেইনড, আর্টিসানাল বা পাউডার চিজ বিক্রির ইচ্ছে রয়েছে। এগুলোর ভোক্তা ভারতের মাত্র ২-৫ শতাংশ মানুষ। ইতিমধ্যেই ইউরোপের কয়েকটি দেশ থেকে এগুলো আমদানি হয়, শুল্ক ৩০-৪০ শতাংশ হারে। ফলে ছোট কৃষকরা প্রভাবিত হবেন না।
কৃষিক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভুট্টাকে সামনে আনছে। মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক বলেছেন, “ভারতের জনসংখ্যা যদি ১৪০ কোটি হয়, তাহলে কেন ১৪০ কোটি মানুষ একটি করে আমেরিকান ভুট্টা কিনবে না?” তবে বাধা আছে এখানেও। অধিকাংশ মার্কিন ভুট্টাই জেনেটিকালি মডিফায়েড, যা ভারত আমদানি করতে দেয় না। এর পাশাপাশি, বিহার নির্বাচনের আগে ভুট্টা আমদানি রাজনীতিতে ঝড় তুলতে পারে, কারণ বিহার ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম ভুট্টা উৎপাদনকারী রাজ্য। সমঝোতার রাস্তা হতে পারে, যদি ভারত এই ভুট্টা সরাসরি মানুষের খাদ্যে নয়, ইথানল উৎপাদনে ব্যবহার করে।
কেন এত আগ্রহ আমেরিকার? কারণ ট্রাম্পের মূল সমর্থক কৃষক সমাজ বর্তমানে ক্ষতির মুখে। গুদাম ভরা সয়াবিন ও ভুট্টা, দাম কম, রপ্তানি বন্ধ। সবচেয়ে বড় ধাক্কা এসেছে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ থেকে। চীন, একসময় মার্কিন সয়াবিনের সবচেয়ে বড় ক্রেতা, চলতি বছর একটিও চালান নেয়নি; বরং ব্রাজিলের দিকে ঝুঁকেছে।
তাই এখন চিজ আর ভুট্টা দিয়েই ট্রাম্প প্রশাসন নতুন বার্তা দিতে চাইছে। ভারতের জন্যও এটা সুবিধাজনক। প্রতীকী ছাড় দিলেও কৌশলগতভাবে লাভ হতে পারে, আবার মার্কিন শুল্ক কমার সম্ভাবনাও তৈরি হবে। রাজনীতির দিক থেকেও দুই দেশের কাছে একে অপরের গুরুত্ব অপরিসীম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারত এক বিশাল বাজার এবং চীনের মোকাবিলায় প্রধান মিত্র। অন্যদিকে, ভারতের কাছে আমেরিকা প্রযুক্তি ও বাণিজ্যের বড় অংশীদার। তাই ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ভারত–আমেরিকা সম্পর্কের এই নতুন অধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে উঠতে পারে।
