আজকাল ওয়েবডেস্ক: মহাকাশে ভরহীন অবস্থায় অক্সিজেন তৈরি করা বেশ কঠিন কাজ। তবে বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন, একটি সাধারণ চুম্বক এই প্রক্রিয়াকে অনেক সহজ করে দিতে পারে।


ইলেক্ট্রোলাইসিস পদ্ধতিতে  জল থেকে বিদ্যুতের মাধ্যমে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন গ্যাস তৈরি করা হয়। কিন্তু মহাকাশে ভরহীন পরিবেশে, গ্যাসের বাবল জলের ওপর উঠতে পারে না। তারা ইলেক্ট্রোডের চারপাশে আটকে থাকে, যার ফলে বিক্রিয়াটি বাধাগ্রস্ত হয়।


১৮ আগস্ট Nature Chemistry জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, একটি নিয়োডিমিয়াম চুম্বক ইলেক্ট্রোডের পাশে রাখলে এই বুদবুদগুলো আলাদা হয়ে যায়। বর্তমানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের ইলেক্ট্রোলাইসিস সিস্টেম জলকে ঘূর্ণায়মান করে বাবলগুলো আলাদা করে। কিন্তু এই পদ্ধতিটি জটিল ও ভারী। গবেষকরা বলছেন, মঙ্গলগ্রহের মিশনের জন্য, এই চুম্বক-নির্ভর সহজ পদ্ধতি হতে পারে ভবিষ্যতের চাবিকাঠি।

আরও পড়ুন: মনের রোগের চিকিৎসা লুকিয়ে রয়েছে মানুষের কাছেই, অবাক করল চিনের এই তথ্য


জর্জিয়া টেক-এর মহাকাশ গবেষক আলভারো রোমেরো-ক্যালভো বলেন, যেহেতু আমরা আরও দূরে মহাকাশে যাচ্ছি তাই নির্ভরযোগ্য লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পরীক্ষা পৃথিবীতেই পরিচালনা করা হয়েছে জার্মানির ব্রেমেন ড্রপ টাওয়ার-এ। এখানে একটি ক্যাপসুলকে ১২০ মিটার উপরে ছুঁড়ে ফেলে নিচে পড়ার সময় কয়েক সেকেন্ডের জন্য প্রায় ভরহীন অবস্থা তৈরি করা হয়। এর ফল হিসেবে দেখা গিয়েছে যেসব ইলেক্ট্রোডের পাশে চুম্বক ছিল সেগুলো থেকে বাবল সহজে বেরিয়ে এসেছে। আর যেসব ইলেক্ট্রোডে চুম্বক ছিল না সেগুলোতে বাবল আটকে থাকে।


কীভাবে চুম্বক কাজ করে?
চুম্বকের কারণে জল সামান্য চুম্বকীয় আচরণ করে এবং তা চুম্বক থেকে দূরে সরতে চায়। ফলে বাবলগুলো চুম্বকের দিকে ধাক্কা খায়।
যদি জলে অ্যাসিড মেশানো থাকে, তাহলে তা আয়ন উৎপন্ন করে, যা চুম্বকীয় ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে গেলে একটা পাশঘেঁষা বল অনুভব করে এবং ফলে তরল ও বাবল ঘূর্ণায়মান হয়ে ওঠে। এই ঘূর্ণনের মাধ্যমে বাবলগুলো ডিভাইসের কেন্দ্রে আসতে পারে, যেখান থেকে তা সংগ্রহ করে ভবিষ্যতে মহাকাশচারীদের শ্বাস নেওয়ার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।


যদি এই কাজটি সফল করা যায় তাহলে দ্রুত মহাকাশে অক্সিজেন তৈরি করতে এই চুম্বক নিজের কাজ করবে। সেখানে মহাকাশে অক্সিজেন নিয়ে যাওয়ার দরকার হবে না। যদি এই চুম্বক সঠিকভাবে নিজের পরীক্ষাতে পাস করে তাহলে সেখান থেকে মহাকাশে অক্সিজেনের সমস্যা অনেকটা কমবে। ফলে সেখান থেকে দেখতে হলে এই আবিষ্কার নতুন দিশা সকলের সামনে খুলে দেবে।


বিষয়টি নিয়ে নাসার সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। সেখান থেকে তারাও এবিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে। যদি সঠিকভাবে এই কাজটি করা যায় তাহলে সেখান থেকে মহাকাশে অক্সিজেনের সমস্যা অনেকটা মিটতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এটি যখন সম্পূর্ণ সফল হবে তখনই একে ব্যবহার করার কথা ভাবা হবে। তাহলেই এটি নিজের কাজ করতে পারবে। নাহলে মহাকাশচারীদের প্রাণ সংশয় পর্যন্ত হতে পারে।