আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভয়াবহ দুর্যোগ সিমলায়। সম্প্রতি সিমলায় সড়ক নির্মাণকাজ চলাকালীন একটি বুলডোজার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। সূত্রে জানা গিয়েছে, হিমাচল প্রদেশের জাতীয় সড়ক ৫-এর জাবলি এলাকায় পাহাড় কেটে রাস্তা খোলার কাজ চলছিল। এমন সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা ঘটনাটির একটি ভিডিও প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, একটি জেসিবি মেশিন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড় থেকে নিচে গড়িয়ে পড়ছে। পাহাড়ের ওপর থেকে আচমকা পাথর গড়িয়ে পড়ায় ভারসাম্য হারিয়ে মেশিনটি প্রায় ৩০০ মিটার নিচে খাদে পড়ে যায়।
সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, ঘটনার পরপরই এক ব্যক্তি পাহাড়ি ঢালে নামতে শুরু করেন। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে থাকা চালকের কাছে কোনওরকমে পৌঁছান তিনি। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন চালক। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও তাঁকে শেষমেশ বাঁচানো সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে চিকিৎসকরা। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা এমন সময় ঘটে, যখন হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে প্রবল বৃষ্টিপাতে দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বন্যা, ভূমিধস এবং সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর ইতিমধ্যেই পাওয়া গিয়েছে। হিমাচল প্রদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (SDMA) জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত মোট ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১০১ জন প্রাণ হারিয়েছেন ভূমিধস, আকস্মিক বন্যা ও বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে, আর ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে দুর্গম সড়কে দুর্ঘটনার কারণে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্র অনুযায়ী, ২০ জুন থেকে ২ অগাস্ট পর্যন্ত টানা বৃষ্টিপাতে রাজ্যজুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জীবনযাত্রা ও জনপরিসেবায় চরম বিঘ্ন দেখা দিয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪০৩টি সড়ক অবরুদ্ধ, ৪১১টি বিদ্যুৎ বিতরণ ট্রান্সফর্মার অকেজো এবং ১৯৬টি জল সরবরাহ প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত সোমবার জম্মু ও কাশ্মীর এবং উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলে খবর। পাশপাশি হিমাচল প্রদেশ এবং পাঞ্জাবের জন্য কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এরপর মঙ্গলবার হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডের জন্য কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অর্থাৎ কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে।
খবর অনুযায়ী, রাজ্যের বারোটি জেলার মধ্যে কমপক্ষে তিন থেকে সাতটিতে ভারি বৃষ্টিপাতের জন্য 'হলুদ' সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এই বৃষ্টিপাত শুক্রবার পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে প্রায় ২০৮টি রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫৭টি মান্ডিতেই। বর্তমানে যানবাহন চলাচলের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে একাধিক রাস্তা। রাজ্য জরুরি অপারেশন সেন্টার (SEOC) অনুসারে, ৭৪৫টি জল সরবরাহ প্রকল্প এবং আরও ১৩৯টি বিদ্যুৎ বিতরণ ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে, ২০ জুন থেকে ১৩ জুলাইয়ের মধ্যে, মোট ৯৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ৫৭ জন বৃষ্টিপাতজনিত ঘটনায় এবং ৪১ জন সড়ক দুর্ঘটনায়। আরও ১৭৮ জন আহত হয়েছেন। বর্ষায় ৩৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ৩১টি আকস্মিক বন্যা, ২২টি ক্লাউডবার্স্ট এবং ১৮টি ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে।
অন্যদিকে, রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যা থেকে সিরমৌর জেলার রাজগড়ে ৭২ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। খাদ্রালা (৪২.৪ মিমি), পাছাদ (৩৮ মিমি), মান্ডি (২৬.৪ মিমি), ভুন্টার (২২ মিমি), শিলারু (১৪.২ মিমি), সেওবাগ (১২.২ মিমি), শিমলা (১১.৫ মিমি) এবং রোহরু (১০ মিমি)।
৩০ জুন থেকে ১ জুলাই রাতে মান্ডি জেলায় দশটি মেঘ ভাঙা বৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধসের ফলে ধ্বংসযজ্ঞের পর নিখোঁজ হন ২৭ জন। খুঁজে বের করার জন্য অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান এখনও অব্যাহত রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
