বৃহস্পতিবার শহরের কোলাহল থেকে খানিক দূরে এক শান্ত রিসর্টে মুক্তি পেল সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের আগামী ছবি ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’-এর ট্রেলার। ছিমছাম আয়োজনে ট্রেলার লঞ্চে হাজির ছিলেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় ও ছবির অন্যতম প্রযোজক রানা সরকার। উপস্থিত ছিলেন শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, আরাত্রিকা মাইতি, দিব্যজ্যোতি দত্ত, সুরকার ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত, শিল্পী বাসবদত্তা এবং কবীর সুমন।

 

 

ট্রেলার মুক্তির আগে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুকে ঘিরে নানান কথার মাঝে নিজের স্বভাবসিদ্ধ রসিকতায় রানা সরকার বলেন, “লোকে বলে, শ্রীচৈতন্যকে নিয়ে গবেষণা করলে নাকি বিপদ অবধারিত। যাঁরা যাঁরা তাঁকে নিয়ে খোঁজখবর করেছেন, তাঁদের নাকি খুন হতে হয়েছে! তবে আপনাদের আশ্বস্ত করে বলি, সৃজিত অনেক পড়াশোনা করে, তথ্য জোগাড় করে, রীতিমতো গবেষণা করেই এই ছবি বানিয়েছে। উনি খুন হননি। আমিও বহু বছর ধরে মহাপ্রভুকে নিয়ে গবেষণা করছি, আমারও তো কিছু হয়নি!”

 

এরপর মাইক্রোফোন হাতে নেন কবীর সুমন। জলদমন্দ্র কণ্ঠে তিনি বলেন, “শ্রীচৈতন্যের সময়টা ছিল এক অদ্ভুত সময়। তখন অন্তত ৫০ জন বাঙালি মুসলমান কবি বৈষ্ণব পদ লিখতেন। তাঁদের একজন ছিলেন শেখ কবীর, যাঁর নাম থেকেই আমার নাম কবীর সুমন। সেই সময় ভালবাসা আর সহিষ্ণুতা একসঙ্গে উড়ছিল নিশানের মতো। সেই যুগটাকে পর্দায় ধরার ক্ষমতা হয়তো সৃজিতেরই আছে। কারণ ছবি তৈরির শৈলী তাঁর আয়ত্তে, আর সবচেয়ে বড় কথা ওঁর ভিতরে আছে খাঁটি ভালবাসা, যা আজ বিরল।”

 

 

ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণেও ভাসেন কবীর সুমন। কলেজ জীবনে তানসেন কনফারেন্সে ওড়িশার শিল্পী সুনন্দা পট্টনায়কের খেয়াল শোনার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে বলেন, “শেষ গানটা হত ‘জগন্নাথ স্বামী’। কী আশ্চর্য সেই গান! আজ ভাবতে ভাল লাগছে, সেই গানটাই আবার ফিরে এসেছে এই ছবির হাত ধরে। এটা একরকম বড় আবিষ্কার। এর জন্য সৃজিত, ইন্দ্রদীপ আর রাণা, তিনজনের প্রতিই কৃতজ্ঞতা।”বাসবদত্তা ও পদ্মপলাশের গায়কীরও প্রশংসা করেন তিনি। বিশেষ করে রাণা সরকারের সুললিত ছন্দে খোল বাজানো তাঁকে চমকে দিয়েছে বলেও জানান।

 

 

শেষে কবীর সুমন বলেন, “এই ছবি মানুষ দেখবে। কেউ প্রশংসা করবে, কেউ নিন্দেও করবে। অবশ্য নিন্দে আমাদের স্বভাব। যাই হোক, লোকে বলে  শ্রীচৈতন্যকে খুন করে হয়েছিল...কিন্তু তবুও তাঁকে মুছে ফেলা যায়নি। তিনি আমাদের মধ্যেই রয়ে গিয়েছেন।”

 

কথাশেষে সুমনোচিত ছন্দে শিল্পী বলে ওঠেন, “এই ছবিতে যে গানটি গেয়েছি, সেটি গেয়েই শেষ করি। স্নায়ুর সমস্যার জন্য আজকাল আর গিটার বাজাতে পারি না। কিন্তু গিটার বাজানো ছাড়াও কিন্তু আমি গাইতে পারি...”  

 

‘গানওলা’র কথা শেষ হওয়ার আগেই চারপাশে তখন হাসির রোল। খানিক থেমে, চারপাশকে আরও নিঃঝুম করে সুমন গেয়ে উঠলেন, লহ গৌরাঙ্গের নাম রে ছবিতে তাঁর গাওয়া গান ‘সে চলে গেলেও থেকে যাবে তাঁর স্পর্শ, আমার-ই হাতের ছোঁয়ায়...’ তাঁর সঙ্গে কণ্ঠ মেলান বাসবদত্তাও। মুহূর্তে নিস্তব্ধ হয়ে যায় চারপাশ, ঠিক যেন গৌরাঙ্গের নামেই বাঁধা পড়ে সেই সন্ধে।