আজকাল ওয়েবডেস্ক: লম্বা ছুটিতে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি দিয়েছেন। প্লেনের জানলা দিয়ে সে দেশের আকাশও ছুঁয়ে ফেলেছেন। হঠাৎই চোখ পড়ল নীচের দিকে। গাছপালার ফাঁক দিয়ে উঁকি মারছে গোলাপী রঙের একটা হ্রদ। না! একেবারেই কল্পনা নয়, অস্ট্রেলিয়ায় এমন অসংখ্য গোলাপী হ্রদ রয়েছে। তা, হ্রদের জল নীল না হয়ে গোলাপী কেন?
হ্রদের জলের রং-রহস্য ভেদ করার আগে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম বিখ্যাত গোলাপী হ্রদের নামটা বলে দেওয়া ভাল। বাব্লগাম রঙের সেই লেক হিলিয়ার রয়েছে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার মিডল আইল্যান্ডে। তবে নীল হোক বা গোলাপী, লেক হিলিয়ারের জলে গা ভাসাতে অনেকেরই উৎসাহের শেষ নেই। কেন?
এই হ্রদের জলে লবণের পরিমাণ এতটাই বেশি যে, ডেড সি-এর মতো এখানেও দিব্যি গা ভাসিয়ে থাকা যায়, ডোবার কোনও আশঙ্কা নেই। তা হলে এখানে পর্যটকদের ভিড় দেখা যায় না কেন? আসলে এক্কেবারে ছোট্ট এই দ্বীপে পৌঁছনো খুব একটা সহজ নয়। বোট বা হেলিকপ্টারে যাওয়া গেলেও দ্বীপটি বেশি দুর্গম।

হিলিয়ার লেকের জল গোলাপি রঙের কেন? এ নিয়ে কৌতূহলের অন্ত নেই। দীর্ঘ দিন ধরে বিজ্ঞানীরা এর কারণ খুঁজে চলেছেন। অনেকেই ভাবতেন, লেক হিলিয়ারে লবণের পরিমাণ বেশি হওয়াতেই তার জলের রং নীল নয়। অনেকের আবার মত ছিল, ওই লেকে মাইক্রোঅ্যালগি বেশি থাকাতেই তার রং গোলাপী। তবে সম্প্রতি সে রহস্য ভেদ হয়েছে।
২০১৫-তে মিডল আইল্যান্ডের লেক হিলিয়ারের জলের রং নিয়ে গবেষণা শুরু করেন এক্সট্রিম মাইক্রোবায়োমি প্রজেক্ট (এক্সএমপি)-এর এক দল বিজ্ঞানী। সে হ্রদের জল কেন গাঢ় গোলাপী, তার সন্ধান শুরু করেন তাঁরা। এক্সএমপি-র বিজ্ঞানীরা প্রথমে ভেবেছিলেন, লেক হিলিয়ারের আশপাশের লবণাক্ত পরিবেশে বেশ কিছু এক্সট্রিমোফিল থাকার জন্য হয়তো তার জলের এই রকম রং। এক্সট্রিমোফিল হল তীব্র প্রতিকূল পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারা কিছু আণুবিক্ষনিক জীব।
মিডল আইল্যান্ডে গিয়ে বিজ্ঞানীরা প্রথমেই লেক হিলিয়ারের জলের নমুনা সংগ্রহ করেন। এর পর এক্সট্রিমোফিলগুলোর ডিএনএ বিশ্লেষণ করেন তাঁরা। কী মেলে সে পরীক্ষায়? পরীক্ষানিরীক্ষার পর বিজ্ঞানীরা দেখেন, লেক হিলিয়ারের জলে রয়েছে দশ ধরনের ব্যাকটিরিয়া, যারা লবণাক্ত পরিবেশে থাকতে ভালবাসে। তা ছাড়াও এখানে রয়েছে, বিভিন্ন প্রজাতির ডানালিয়েলা অ্যালগি বা শ্যাওলা। যার বেশির ভাগের রংই সবুজের পরিবর্তে গোলাপি বা লাল রঙের।
আরও পড়ুন: জেগে উঠল আগ্নেয়গিরি, মিলে যাচ্ছে বাবা ভাঙ্গার কথা, এবার কী তাহলে...
এই ধরনের শ্যাওলার রঙের জন্যই কি লেক হিলিয়ারের জলের রং গোলাপী? না! এর থেকে অবাক করে দেওয়া তথ্য পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা ওই নমুনায় যে সব ব্যাকটিরিয়া মিলেছে, তার মধ্যে ছিল এক বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়াও। তবে সম্প্রতি বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে এই গোলাপী লেকের চরিত্র ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করেছে। এখানকার জলে নেমে আর বেশি করে কাউকে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে সেখান থেকে দেখতে হলে এটি পরিবেশের দিক থেকে বড় প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই গোলাপী লেকের চরিত্র আরও বদলে যাবে। ফলে সেখান থেকে এখান থেকে যে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠেছিল সেটি আর থাকবে না।
