আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভয়ানক আগ্নেয়গিরির তাপে পুড়ছে গোটা ইন্দোনেশিয়া। ইতিমধ্যে এর ছাইয়ের উচ্চতা হয়েছে ১০ কিলোমিটার বা বলা ভাল ৬.২ মাইল। শুক্রবার রাত থেকে এই আগ্নেয়গিরির মেজাজ দেখে ভয় পেয়েছেন সকলেই। এরফলে বালি ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরে বহু বিমানকে বাতিল করতে হয়েছে।


মাউন্ট লেওটোবি লাকি লাকি আগ্নেয়গিরি যে সকলের কাছে লাকি নয় সেটা এবার সকলেই হাতে নাতে প্রমাণ পেয়েছেন। এটি একটি ভ্রমণের জায়গা ছিল। এখানে প্রতি বছর প্রচুর মানুষ ঘুরতে আসতেন। তবে যেদিন থেকে ফের জেগে ওঠার আভাষ দিয়েছে সেদিন থেকে বন্ধ হয়েছে সমস্ত ভ্রমণ। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, এটির বর্তমান ছাইয়ের উচ্চতা প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার। 


যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও ক্ষতির খবর আসেনি। তবে যেভাবে এটি জেগে উঠছে তাতে আশেপাশের বাসিন্দারা নিজেদের ঘর ছেড়ে অন্যত্র সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। গোটা এলাকার পরিবেশটাই যেন পরিবর্তন হয়েছে। 


আগ্নেয়গিরির জেরে গোটা এলাকার আকাশ কালো হয়ে গিয়েছে। সেখান থেকে নদী সংলগ্ন এলাকাতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এই এলাকা থেকে সকলকে ৬ কিলোমিটার দূরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিগত মাসেও এখান থেকে যে পরিমানে ছাই বেরিয়ে আসছিল সেখান থেকে বালি বিমানবন্দরের প্রচুর বিমানকে বাতিল করে দিতে হয়েছিল। এই এলাকাটি রিং অফ ফায়ারের মধ্যে পড়ে। তাই সেখান থেকে আর কোনও বড় ক্ষতি হবে কিনা তা নিয়ে সকলেই এবার চিন্তিত।


রিং অফ ফায়ার হল সক্রিয় এবং সুপ্ত আগ্নেয়গিরির একটি বিশাল বেল্ট যা প্রশান্ত মহাসাগরের বেশিরভাগ অংশকে ঘিরে রেখেছে। এটি দক্ষিণ চিলি থেকে শুরু করে আমেরিকার পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত, আলাস্কার দ্বীপপুঞ্জ এবং জাপানের নিচে ফিলিপাইন পর্যন্ত বিস্তৃত। কিছু ভূতাত্ত্বিকের মতে, এই রিংয়ে ইন্দোনেশিয়ান আগ্নেয়গিরির একটি শৃঙ্খলও রয়েছে।


এই আগ্নেয়গিরিগুলি সাবডাকশনের কারণে উদ্ভূত হয় - প্রতিবেশী প্লেটের নীচে একটি টেকটোনিক প্লেটের চলাচল - যা ম্যান্টলে শিলার গলনাঙ্ককে কমিয়ে দেয়। শিলাটি ম্যাগমায় পরিণত হয়, পৃষ্ঠে উঠে আসে এবং আগ্নেয়গিরি হিসাবে অগ্ন্যুৎপাত করে।


কিন্তু রিং অফ ফায়ার এই সাবডাকশনটি ব্যাপকভাবে করে। ফিলাডেলফিয়ার ড্রেক্সেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আগ্নেয়গিরিবিদ লোক ভ্যান্ডারক্লুইসেন বলেন, "রিং অফ ফায়ারের বিশেষত্ব হল প্রশান্ত মহাসাগরের একাধিক মহাসাগরীয় প্লেটের সাবডাকশন সীমানা রয়েছে।" 

আরও পড়ুন:  সোনা নাকি এসআইপি, কোথায় বিনিয়োগ করলে লাভ হবে বেশি, দেখে নিন এখনই


  
ভ্যান্ডারক্লুইসেন ব্যাখ্যা করেছেন যে পৃথিবীতে ৩৪,০০০ মাইল (৫৫,০০০ কিলোমিটার) সাবডাকশন প্লেট সীমানার প্রায় ৯০% প্রশান্ত মহাসাগরে পাওয়া যায়।এই টেকটোনিক নড়াচড়ার ফলেও ভূমিকম্প হয়। যখন একটি প্লেট অন্য প্লেটের নিচে চাপা পড়ে, তখন "প্লেটগুলি একে অপরের সাথে ধাক্কা খাওয়ার সময় প্রচুর শব্দ হয়," রিং অফ ফায়ারে পৃথিবীর প্রায় ৭৫% সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে এবং পরিমাপিত ৯০% ভূমিকম্প এখানেই ঘটে।
"রিং অফ ফায়ার" নামটি নিয়ে গবেষকদের মধ্যে তীব্র বিতর্ক রয়েছে। অনেক বিজ্ঞানী এই শব্দটিকে ঘৃণা করেন। প্রথমত, এটি আসলে একটি সম্পূর্ণ বলয় নয়। আগ্নেয়গিরিগুলি টেকটোনিক প্লেটের প্রান্ত অনুসরণ করে, যা কেবল প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর, পূর্ব এবং পশ্চিমে অধঃপতিত হয়। এছাড়াও, বলয়ের কিছু অঞ্চলে কোনও আগ্নেয়গিরি নেই, যেমন পেরু এবং মধ্য চিলি।