যে কোনও দম্পতির কাছে সন্তান সুখ জীবনের একটি বিশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা। আধুনিক জীবনযাত্রায় গর্ভধারণে বেশ অনেকটাই দেরি হতে দেখা যায়। সঙ্গে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মতো নানা কারণে র বার চেষ্টা করেও সন্তানধারণে ব্যর্থ হন অনেকে।  সময়ের সঙ্গে বেড়েই চলেছে বন্ধ্যত্বের সমস্যা। আইভিএফ অথবা ‘ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন’ পদ্ধতির মাধ্যমে সন্তান সুখ লাভ করছেন অনেক দম্পতি। কিন্তু আইভিএফ পদ্ধতি মানেই যে সাফল্য, এমনটা নয়। অনেক ক্ষেত্রেই আইভিএফ বেছে নিয়েও দম্পতিরা সন্তানধারণে ব্যর্থ হন। সেক্ষেত্রে এই পদ্ধতি শুরু করার আগে দম্পতিদের কোন কোন বিষয় খেয়াল রাখা উচিত, সেবিষয়ে জানালেন আভা সার্জি সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও চিফ কনসালটেন্ট ড. বাণী কুমার মিত্র। 

১. আইভিএফ মানেই নিশ্চয়তা নয়, বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা রাখুনঃ অনেকেই মনে করেন, আইভিএফ করলেই সন্তান হবে—এই ধারণা সঠিক নয়। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি সাফল্যের হার বাড়ালেও তা প্রত্যেকের বয়স, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য প্রজনন সমস্যার উপর নির্ভর করে। ৩৫ বছরের কম বয়সি মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রতি চক্রে গড় সাফল্যের হার প্রায় ৪০-৪৫%, তবে বয়স বাড়লে তা কমে যায়। অনেক দম্পতিকেই একাধিক চক্রের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, প্রতিটি চক্রেই থাকতে পারে শারীরিক ও মানসিক চ্যালেঞ্জ। তাই শুরু থেকেই বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা রাখলে তা মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুনঃ এবার ডায়াবেটিসেও নির্দ্বিধায় খান বিরিয়ানি! পৃথিবীর মধ্যে প্রথম ‘ডায়াবেটিক ফ্রেন্ডলি’ বিরিয়ানি নিয়ে এল কলকাতার এই রেস্তোঁরা

২. সময় ও ধৈর্য দরকারঃ এই প্রক্রিয়া একদিনে শেষ হয় না। আইভিএফ একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। সাধারণত একেকটি চক্র ৪-৬ সপ্তাহের মতো সময় নেয়। এর মধ্যে থাকে ওভারি স্টিমুলেশন, ডিম্বাণু সংগ্রহ, নিষিক্তকরণ ও ভ্রূণ স্থানান্তর। তবে তার আগে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা যেমন হরমোন টেস্ট, সিমেন অ্যানালাইসিস, আলট্রাসোনোগ্রাফি ও সংক্রমণজনিত স্ক্রিনিং প্রয়োজন হয়।যদি ভ্রূণ সংরক্ষণ বা জেনেটিক পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয়, তাহলে সময় আরও বাড়ে। তাই কাজের সময়সূচি, ভ্রমণ পরিকল্পনা এবং অন্যান্য বিষয় এই অনুযায়ী সাজানো দরকার। এই সময় মানসিক ও শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৩. খরচের বিষয়টি স্পষ্টভাবে বুঝে নিনঃ আইভিএফ একটি ব্যয়বহুল চিকিৎসা। আইভিএফ পদ্ধতিতে একাধিক খরচ থাকতে পারে। ভারতে একটি চক্রের প্রাথমিক খরচ সাধারণত দেড় লাখ থেকে আড়াই লাখের মধ্যে হয়। তবে ওষুধ, ভ্রূণ সংরক্ষণ, জেনেটিক টেস্টিং (পিজিটি) বা ডোনার ব্যবহারের জন্য খরচ আরও বাড়তে পারে। অনেক ক্লিনিকের তরফে প্যাকেজ বা ‘ফিন্যান্সিং অপশন’-এর ব্যবস্থা থাকে, কিন্তু শুরুতেই খরচের স্পষ্ট হিসেব চাওয়া জরুরি। খরচের মধ্যে কীকী  অন্তর্ভুক্ত রয়েছে তাও স্পষ্ট জানা দরকার। 

৪. মানসিক প্রস্তুতি অপরিহার্যঃ শারীরিক ছাড়াও আইভিএফ মানসিকভাবে ক্লান্তিকর হতে পারে। হরমোনাল ওষুধের কারণে মেজাজ পরিবর্তন, উদ্বেগ বা অবসাদ দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের পর ‘দুই সপ্তাহের অপেক্ষা’ অনেক দম্পতির জন্য মানসিক দিক থেকে খুব চাপের হয়। চেষ্টা ব্যর্থ হলে হতাশা ও কষ্ট আরও বাড়ে। তাই প্রয়োজনে সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিংয়ের সহায়তা নিতে পারেন। 

৫. খোলামেলা যোগাযোগ জরুরিঃ দম্পতিরা নিজেদের মধ্যে খোলামেলা কথা বললে মানসিক চাপমুক্ত থাকবেন। একইভাবে চিকিৎসকের সঙ্গেও স্পষ্টভাবে আলোচনা জরুরি। চিকিৎসার ধাপ, ঝুঁকি, বিকল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন করতে দ্বিধা করবেন না।