সেই নবাব আমল থেকে পথচলা শুরু। সময়ের সঙ্গে স্বাদে খানিকটা বদল এলেও আজই বিরিয়ানি এতটুকু জনপ্রিয়তা  হারায়নি। এই নবাবী খাবার পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু ভালবাসলেই কি আর সবাই খেতে পারেন? বিশেষ করে ডায়াবিটিসে স্বাস্থ্যের কথা ভেবে অনেকেই এই লোভনীয় পদ থেকে দূরে থাকেন! কিন্তু আর নয়, এবার থেকে ব্লাড সুগারের চোখরাঙানি থাকলেও দিব্যি খেতে পারবেন বিরিয়ানি। মধুমেহ রোগীদের জন্য অভিনব আয়োজন করেছে ‘অওধ ১৫৯০’। 

দিনকেদিন বিশ্ব জুড়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আর একবার এই রোগটি হানা দিলেই সঙ্গী হয় খাওয়াদাওয়ার বিধিনিষেধ। স্বাভাবিকভাবেই কোপ পড়ে বিরিয়ানি খাওয়াতেও। তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের কথা ভেবেই এক বিশেষ ধরনের বিরিয়ানির আয়োজন করেছে ‘অওধ ১৫৯০’। নাম ‘ডায়াবেটিক ফ্রেন্ডলি বিরিয়ানি। সহজে বলতে গেলে, শরীরে ডায়াবেটিস হানা দিলেও এই বিরিয়ানি নির্বিদ্ধায় খেতে পারবেন।

প্রায় এক যুগ আগে কলকাতাবাসীকে লখনউ বিরিয়ানির স্বাদ চিনিয়েছিল ‘অওধ ১৫৯০’। নেপথ্যে ছিলেন দুই কর্ণধার শিলাদিত্য এবং দেবাদিত্য চৌধুরী। এই রেস্তোঁরার আলো-আঁধারির খেলার সঙ্গে ঠুংরি, খেয়াল শুনতে শুনতেই এবার ডায়াবেটিসে আক্রান্তরাও বিরিয়ানি খেতে পারবেন। এমন‘ডায়াবেটিক ফ্রেন্ডলি’ বিরিয়ানি যার হাত ধরে বাস্তবায়িত হয়েছে, তিনি হলেন বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ নিধি প্রকাশ। প্রায় ছয় মাস ধরে তিনি এই বিরিয়ানি নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন। এবার থেকে ‘অওধ’-এ‘ডায়াবেটিক মুরগ বিরিয়ানি’, ‘ডায়াবেটিক সাবজ বিরিয়ানি’-এই দু’ধরনেরই আমিষ ও নিরামিষ পদের বিশেষ ‘ডায়াবেটিক বিরিয়ানি’ পাওয়া যাবে। 

কতটা আলাদা এই ‘ডায়াবেটিক ফ্রেন্ডলি’ বিরিয়ানি? আসলে সাধারণ বিরিয়ানিতে বাসমতী চাল, আলু, চিকেন কিংবা মটন, তেল এবং মশলা ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে মূলত সাদা ভাতের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম করা হয়েছে। যার জন্য ‘পারবয়েলড রাইস’ অর্থাৎ এক ধরনের সেদ্ধ চাল এবং আলুর পরিবর্তে মিষ্টি আলু ব্যবহার করা হয়েছে। ডায়াবেটিক ভেজ বিরিয়ানিতে সয়াবিন, প্রচুর পরিমাণে সবজি এবং মুরগ বিরিয়ানিতে চর্বিহীন মুরগির মাংস দেওয়া হয়েছে। ‘অওধ’-এর এই বিরিয়ানি খেলে  ব্লাড সুগার বেড়ে যাওয়ার চিন্তা থাকবে না বলেই আশ্বাস দিয়েছেন পুষ্টিবিদ। আমিষ হোক বা নিরামিষ, ৪০০ গ্রাম বিরিয়ানি থেকে ২৫০ গ্রাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন নিধি প্রকাশ। 

আরও পডুনঃ স্বাস্থ্যের জন্য ভাল ভেবে রোজ দেদার ঘি খাচ্ছেন? আদৌ উপকার হচ্ছে নাকি অজান্তে কঠিন অসুখের ফাঁদে পড়ছেন?

বুধবার থেকে ‘অওধ’-এ ‘ডায়াবেটিক ফ্রেন্ডলি’ এই বিরিয়ানি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে। এদিন  এই স্পেশাল পদ চেখে দেখতে রেস্তোরাঁয় পৌঁছে গিয়েছিলেন অভিনেতা সোহম চক্রবর্তী। যিনি নিজেও ডায়াবিটিসে আক্রান্ত। তাঁর কথায়, “আমার মতো যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাঁদেরও বিরিয়ানির খেতে ইচ্ছে করে। কোথাও না কোথাও সবসময়ে নিয়ম মানা যায় না। কিন্তু এখন বিরিয়ানি খাওয়া অনেক সহজ হয়ে গেল। এবার থেকে যখন ইচ্ছে এখানে এসে বিরিয়ানি খেতে পারব।”

এই নতুন ভাবনার প্রসঙ্গে ‘অওধ ১৫৯০’-এর এক কর্ণধার দেবাদিত্য বলেন, “আমরা অনেক সময়ে দেখেছি ডায়াবেটিস থাকলে অনেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিরিয়ানি খেতে দ্বিধাবোধ করেন। সেখান থেকেই আমাদের এই ভাবনা আসে। পৃথিবীতে ডায়াবেটিকদের এমন বিরিয়ানির আয়োজন কোথাও নেই।” রেস্তোরাঁর আরেক কর্ণধার শিলাদিত্যর কথায়, “আজকাল বিরিয়ানি খাওয়ার চল অনেক বেড়েছে। অসুস্থতার জন্য কেউ কোনও বিশেষ খাবার থেকে বাদ পড়বেন তা ঠিক নয়। সেই কারণেই আমাদের ডায়াবেটিক ফ্লেন্ডলি বিরিয়ানি তৈরি। আমাদের আর পাঁচটা বিরিয়ানির মতো এটিতেও একই রকম স্বাদ পাবেন।”শুধু রেস্তোঁরায় বসেই নয়, চাইলে অনলাইনে অর্ডার করেও ডায়াবেটিকরা এই বিরিয়ানির স্বাদ নিতে পারবেন। তবে পরিমাণের দিকে খেয়াল না রাখলে কিন্তু চলবে না!