অসুখ হলে ওষুধ খেতে হয়-এ কথা আমাদের সকলেরই জানা। কিন্তু ওষুধ খাওয়ার যেমন প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তেমনই সঠিক নিয়মে ওষুধ খাওয়াও জরুরি। এখানেই অনেকে ভুল করে বসেন। অনেকের ক্ষেত্রে ওষুধ খাওয়ার তৎপরতা দেখা গেলেও ওষুধ সেবনের নিয়মের প্রতি উদাসীনতা বিশেষত চিকিৎসকের পরামর্শ না মেনে ওষুধ খাওয়ার ঝোঁক দেখা যায়। যার ফলেই জীবন রক্ষাকারী ওষুধ 'প্রাণনাশের কারণ' হয়ে ওঠে। আসলে লক্ষণ এক হলেই যে অসুখ এক হবে এমন কোনও কথা নেই। আবার একই রোগে একই ওষুধের মাত্রা রোগীভেদে ভিন্ন হতে পারে। সেই কারণেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খেলে ফল মারাত্মক হতে পারে। 

এদেশে চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে ওষুধ খাওয়া জনপ্রিয় এবং ঝুঁকিপূর্ণ অভ্যাস। অনেকের মধ্যেই এই প্রবণতা দেখা যায়। জ্বর হোক বা মাইগ্রেন কিংবা শরীরে সামান্য অস্বস্তি হলেই অনেকেই পেইনকিলার খেয়ে নেন। যা হয়তো সাময়িক স্বস্তি দেয়, কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন টপাটপ ওষুধ খাওয়ার পরিণাম কী হতে পারে? বিশেষজ্ঞদের মতে, মাথাব্যথা বা জ্বর হলেই ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস একেবারেই স্বাস্থ্যকর নয়। 

 

আরও পড়ুনঃ সন্তানধারণের চেষ্টায় বার বার ব্যর্থ হচ্ছেন? যৌনতা নিয়ে এই সব ভুল ধারণায় বিশ্বাস করেন না তো?

 

* দীর্ঘমেয়াদি জ্বর মানেই রোগ নয়, বরং শরীরের সতর্কবার্তাঃ জ্বর শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। সামান্য জ্বর হলে বিশ্রাম, জলপান ও পুষ্টিকর খাবারই যথেষ্ট। বারবার ওষুধ খেলে শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

* মাইগ্রেনের ওষুধ নয়, দরকার সঠিক চিকিৎসাঃ প্রায়ই মাইগ্রেনের জন্য পেইনকিলার খেলে তা বিপদ বাড়াতে পারে। এতে মেডিকেশন-ওভারইউস হেডেক” নামে নতুন এক ধরনের ক্রনিক মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে। বার বার ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে মাইগ্রেনের মূল কারণ চিহ্নিত করে তার নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

* অতিরিক্ত ওষুধ কিডনি-লিভারের ক্ষতি করতে পারেঃ বিনা প্রয়োজনে এবং দীর্ঘদিন ধরে পেইনকিলার খেলে কিডনি ও লিভারের উপর চাপ পড়ে, এমনকী পাকস্থলীর সমস্যা পর্যন্ত হতে পারে।

* সবসময় ব্যথা মানে বড় কোনও রোগের সংকেতও হতে পারেঃ বারবার জ্বর বা মাথাব্যথা হয়তো শরীরে অন্য কোনও জটিল সমস্যা যেমন ইনফেকশন, অটোইমিউন অসুখ বা ক্যানসারের প্রাথমিক ইঙ্গিতও হতে পারে। সেক্ষেত্রে ওষুধ খেয়ে উপসর্গ লুকিয়ে রাখলে সঠিক রোগ নির্ণয়ে দেরি হয়ে যেতে পারে।

কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি

* দীর্ঘদিন শরীরে কোনও রকম অস্বস্তি বোধ হলে 
* জ্বর ২-৩ দিনের বেশি থাকলে কিংবা ১০২ ফারেনহাইটের বেশি তাপমাত্রা থাকলে বা কাঁপুনি দিলে
* মাথাব্যথার সঙ্গে বমি, চোখে ঝাপসা দেখার মতো সমস্যা দেখা দিলে নিজে থেকে ওষুধ না খেয়ে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আসলে যে কোনও অসুখই শরীর প্রথমে সংকেত দেয় আর সেই সংকেত উপেক্ষা কিংবা না বুঝে ওষুধ খেলে উপকার নয়, উলটে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাই জ্বর বা মাথাব্যথা হলে ওষুধ নয়, আগে ঠিক কী কারণে সমস্যা হচ্ছে তার কারণ বুঝুন এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।