যে কোনও দম্পতির কাছে সন্তান সুখ জীবনের একটি বিশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা। আধুনিক জীবনে গর্ভধারণে বেশ অনেকটাই দেরি হতে দেখা যায় কিংবা বার বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন অনেকেই। আজকাল কর্মব্যস্ততার জীবনে ভুল খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চায় অনিয়ম সহ একাধিক কারণে অল্প বয়সেই জাঁকিয়ে বসছে বিভিন্ন অসুখ। প্রভাব পড়ছে যৌন জীবনেও। কমবয়সিদের মধ্যেও বন্ধ্যাত্বের সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
নিঃসন্দেহে শারীরিক মিলন দু’টি মানুষের সম্পর্কের রসায়নকে আরও দৃঢ় করে। সার্বিকভাবে সুস্থ জীবনের জন্যও সুখকর যৌনজীবন জরুরি। যৌনতা শুধুই তাৎক্ষণিক নয়, এর প্রভাব রয়েছে সুদূরপ্রসারীও। আসলে যতই সেক্স এডুকেশনের চর্চা হোক, আজও যৌনতা নিয়ে রাখঢাক রয়েই গিয়েছে। তাই তো যৌনতা নিয়ে বেশ ভুল ধারণা দিব্যি প্রচলিতও রয়েছে। যার প্রভাব পড়ে সন্তানধারণের প্রক্রিয়াতেও। অনেক দম্পতি সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করলেও নানা ভুল ধারণার কারণে সমস্যার সম্মুখীন হন। এইসব ভুল ধারণা শুধু মানসিক চাপই বাড়ায় না, গর্ভধারণে বাধাও হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু সত্যি কি এই সব ধারণা সমস্যা হতে পারে, নাকি এগুলো শুধুই 'মিথ'? আসুন জেনে নেওয়া যাক-
* রোজ সঙ্গম করলেই গর্ভধারণ সহজ হয়ঃ এটি একেবারেই ভুল ধারণা। প্রতিদিন সঙ্গম করলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব পড়ে ঠিকই। কিন্তু রোজ মিলনে লিপ্ত হলেই যে গর্ভধারণ সহজ হবে, এমনটা নয়। বরং প্রতিদিন শারীরিক মিলনে লিপ্ত হলে শুক্রাণুর গুণমান কমে যেতে পারে। এক্ষেত্রে ডিম্বস্ফোটনের সময়ের আশেপাশে প্রতি ২ দিন অন্তর যৌনসম্পর্ক করাই বেশি কার্যকর।
* ওভুলেশন চলাকালীনই শুধু গর্ভধারণ সম্ভবঃ এই ধারণা আংশিক সঠিক। ডিম্বাণু নির্গমনের ৫ দিন আগেও সঙ্গম করলে করলে গর্ভধারণ সম্ভব। কারণ শুক্রাণু শরীরে ৫ দিন পর্যন্ত জীবিত থাকে।
* নিয়মিত ঋতুস্রাব মানেই গর্ভধারণে কোনও সমস্যা নেইঃ এমন ধারণা মোটেও ঠিক নয়। নিয়মিত ঋতুচক্র থাকলেও পলিসিস্টিক ওভারি, ফ্যালোপিয়ান টিউব ব্লক বা অন্যান্য সমস্যা থাকতে পারে, যা গর্ভধারণে বাধা দেয়।

* পুরুষদের মধ্যে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা খুব কমঃ এই ধারণা একেবারেই ঠিক নয়। আজকের দিনে বন্ধ্যাত্বের প্রায় ৫০% ক্ষেত্রেই সমস্যা পুরুষের শরীরে থাকে। স্পার্ম কাউন্ট ও শুক্রাণুর মান কমে যাওয়াই প্রধান কারণ।
* বয়স ৩০ পেরলেই গর্ভধারণ অসম্ভবঃ অনেকেই অতিরঞ্জকতা রয়েছে এই ধারণা। হ্যাঁ, বয়স বাড়ার সঙ্গে ফার্টিলিটি কমে ঠিকই। কিন্তু ৩০ বা এমনকী ৩৫-এর পরেও বহু নারী সফলভাবে মা হতে পারেন। বিশেষ করে বর্তমানে অনেক অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে এই প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়েছে।
* একবার প্রেগনেন্সি হয়ে গেলে আবারও হবেঃ এই ধারণা নিশ্চিত নয়। প্রথমবার সন্তান ধারণ করলেও পরবর্তীতে সেকেন্ডারি ইনফার্টিলিটি দেখা দিতে পারে। তাই সবসময় নিয়মিত চেকআপ করা প্রয়োজন।
* লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করলে গর্ভধারণে সমস্যা হয়ঃ সবসময় এমনটা নয়। আসলে সব লুব্রিকেন্ট নয়, কিছু নির্দিষ্ট লুব্রিকেন্ট শুক্রাণুর গতিবিধিকে ব্যাহত করতে পারে। তাই যদি গর্ভধারণের চেষ্টা করেন, তবে মেডিকেল-গ্রেড লুব্রিকেন্ট বেছে নেওয়াই শ্রেয়।
