গত কয়েক দশকে হু হু করে বেড়েছে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা। এক সময় মনে করা হত ডায়াবেটিস বয়স্কদের রোগ। কিন্তু বর্তমানে ৩০ পেরতে না পেরতেই ভোগাচ্ছে ব্লাড সুগার। এই রোগটি তখনই হানা দেয় যখন আমাদের শরীর কম ইনসুলিন তৈরি করতে শুরু করে অথবা সেই ইনসুলিন কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে না। ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায় এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মাফিক ওষুধের সঙ্গে আরও বেশ কিছু বিষয়ে নজর রাখা জরুরি। কিন্তু জানেন কি শুধু জীবনযাপনের ধরন, পারিবারিক ইতিহাস, খাদ্যভাস নয়, রান্নার বাসন থেকেও হতে পারে ডায়াবেটিস। শুনতে অবাক লাগলেও ননস্টিক বাসন ব্যবহার করলে ব্লাড সুগার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। গবেষকরা এমনই তথ্য সামনে এনেছেন। 

ঘরে রান্নার জন্য অনেকেই ননস্টিক প্যান, কড়াই সহ বিভিন্ন ধরনের বাসনপত্র ব্যবহার করেন। এসব পাত্রে কম তেলে সহজে রান্না সম্ভব হয় বলে বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু এই ‘সুবিধা’র আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পারে ভয়ংকর বিপদ। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই তথ্য। গবেষকরা জানিয়েছেন, নিয়মিত নন-স্টিক বাসন ব্যবহারে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়। 

 

আরও পড়ুনঃ ডান-বাঁ দিকে ফিরে নাকি উপুড় বা চিত হয়ে, জানেন কোন ভঙ্গিমায় ঘুমালে ভাল থাকবে শরীর?

 

কেন ননস্টিকের বাসনে ঝুঁকি

আসলে ননস্টিক বাসন তৈরিতে পিএফএএস অর্থাৎ  পারফ্লুরোঅ্যালকাইল এবং পলিফ্লুরোঅ্যালকাইল পদার্থ ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে, যখন ননস্টিক বাসন উচ্চ তাপমাত্রায় উত্তপ্ত হয়, তখন এটি পারফ্লুরোওকটানোয়িক অ্যাসিড সহ কিছু ক্ষতিকারক রাসায়নিক এবং বিষাক্ত ধোঁয়া নির্গত করতে পারে। এই সব ক্ষতিকর রাসায়নিকগুলো শরীরে জমা হয়। দীর্ঘ সময় এই রাসায়নিক শরীরে জমে থেকে বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায়। যা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় বলে মত গবেষকরা। পিএফএএসের সংস্পর্শে ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হতে পারে। আর ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা হল এমন একটি অবস্থা যেখানে শরীরের কোষগুলো ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীল থাকে না, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়াও পিএফএএসের লিভারের সমস্যা, হাড়ের খনিজ ঘনত্ব হ্রাস এবং মহিলাদের মধ্যে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বাড়তে পারে। 

আমেরিকার মাউন্ট সিনাই স্কুল অফ মেডিসিন-এর এক গবেষণায় প্রায় ৭০ হাজার মানুষের উপর একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছে। যেখানে দেখা গিয়েছে, যাদের শরীরে পিএফএএস-এর মাত্রা বেশি, তাঁদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা অন্তত ৩০ শতাংশ বেশি থাকে। শুধু তাই নয়, এই রাসায়নিক শরীরের অ্যামিনো অ্যাসিড এবং ওষুধ বিপাকের প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়। আসলে পিএফএএসে ব্যবহৃত হয় এমন বিভিন্ন পণ্য যেমন নন-স্টিক বাসন, প্রসাধনী, ফাস্ট ফুডের প্যাকেট শরীরের ভেতরে গিয়ে দীর্ঘদিন থাকে ও বিপাকীয় কার্যকলাপ নষ্ট করে। 

কী করণীয়

* পুরনো ও ক্ষতিগ্রস্ত নন-স্টিক পাত্র বাতিল করুন
* স্টিল, কাচ, সিরামিক বা কাস্ট-আয়রনের পাত্র ব্যবহার করতে পারেন। 
* রান্নার সময় তাপমাত্রা কমিয়ে রাখুন। অর্থাৎ যেন পিএফএএস নির্গত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।