সুস্থতার জন্য ঘুম অত্যন্ত জরুরি। পর্যাপ্ত ঘুম যেমন শরীরকে চাঙ্গা রাখে, তেমনই ফুরফুরে রাখে মনও। শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হয় ঘুমের মাধ্যমেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, এককথায় সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করে ঘুম। বেশ কয়েক রাতে ঘুম কম হতে থাকলে ক্লান্তিভাব, মনোযোগের অভাব, বিষণ্ণতা, উদ্বেগও বাড়তে পারে। আর যদি এই ঘুম কম হওয়াটা চলতেই থাকে, তাহলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও ওজন বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। চিকিৎসকদের মতে, প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। সঙ্গে ঘুমের মান ঠিক থাকাও জরুরি। যার জন্য ঘুমের ওষুধের উপর ভরসা নয়, ভাল ঘুমের জন্য প্রয়োজন সঠিক 'স্লিপিং প্যাটার্ন'ও। অর্থাৎ আপনি কীভাবে বা কোন ভঙ্গিমায় ঘুমাচ্ছেন তার উপর সুস্থতা নির্ভর করে। ঠিক ভঙ্গিমায় ঘুমালে যেমন শরীর ভাল থাকে, তেমনই ভুল পদ্ধতিতে ঘুমালে বারোটা বাজতে পারে শরীরের।  

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাঁ পাশ ফিরে ঘুমানো শরীরের জন্য ভাল। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বাঁ দিক ফিরে ঘুমোলে লিভারের কার্যকারিতা ঠিক থাকে। বদহজম, বুকজ্বালা, কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস-অম্বলের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই ভরসা রাখেন ওষুধ এবং নানা ধরনের ঘরোয়া টোটকায়। সেক্ষেত্রে বাঁ পাশ ফিরে ঘুমালেও মিলবে সুফল। একইসঙ্গে এই দিকে ঘুমালে অ্যাসিড রিফ্লাক্স এবং পেশীর ব্যথা কমার সম্ভাবনা থাকে। 

 

আরও পড়ুনঃ মাইগ্রেনের যন্ত্রণায় জীবন জেরবার? সাবধান! এই ৫ খাবার খেলেই হতে পারে মারাত্মক ক্ষতি

 

অনিদ্রার সমস্যা থাকলে বাঁ পাশ ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করে দেখতে পারেন। এতে নাক ডাকার সমস্যাও কমতে পারে। একইসঙ্গে বাঁ দিকে ফিরে ঘুমালে হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখা সম্ভব। কমে যায় হৃদরোগের ঝুঁকিও। গর্ভাবস্থায় ভাল ঘুমের জন্য মহিলাদের বাঁ পাশ ফিরে ঘুমোনোর পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে ক্রমাগত একইদিকে ফিরে ঘুমালে কাঁধ এবং ওই জায়গার অন্য অংশে ব্যথা হতে পারে। সেক্ষেত্রে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দিক পরিবর্তন করে ঘুমাতে পারেন।

কখনই গুটিসুটিভাবে হাঁটু মুড়ে শোয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয়। একটানা এইভাবে ঘুমালে পিঠে, ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। উপুড় হয়ে ঘুমোলে মেরুদণ্ডে প্রভাব পড়ে। পেটে চাপ দিয়ে শোওয়ার ফলে শরীরের পুরো ওজনটাই পেটের উপর পড়ে। দীর্ঘ দিন এমন ভঙ্গিতে ঘুমোলে মেরুদণ্ডের ব্যথা ভোগাতে পারে। ঘাড়ের পেশিতেও টান পড়ে। এতে ঘাড়, পিঠ এবং কাঁধের ব্যথার সঙ্গে হতে পারে ত্বকের নানান সমস্যাও। চামড়া কুঁচকে যেতে পারে, বলিরেখা পড়তে পারে ত্বকে।চিৎ শোয়াও স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয়। এক্ষেত্রে স্লিপ অ্যাপনিয়া, শ্বাসের কষ্ট, নাক ডাকার সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

দুই হাত সোজা মাথার উপর দু’পাশে করে কিংবা হাত দুই পাশে ছড়িয়ে রেখে চিত হয়ে শোওয়ার অভ্যাসও ঠিক নয়। এমনভাবে ঘুমোলে স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা হতে পারে। ঘুমের সময়ে শ্বাসের কষ্ট এবং নাক ডাকার সমস্যাও দেখা দেবে।

আবার যে কোনও এক পাশে একটি পায়ের হাঁটু বুকের কাছে মুড়ে রেখে এবং দুই হাত সামনের দিকে বাড়িয়ে শোওয়াও সঠিক নয়। দীর্ঘদিনের এই অভ্যাসে কাঁধ, ঘাড়, ও কোমরের ব্যথায় ভুগতে পারেন।