আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাশিয়ার আগ্রাসন বেড়ে চলার প্রেক্ষাপটে এবং ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি ধৈর্য হারিয়ে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রবিবার ঘোষণা করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ করবে। “আমরা ওদের প্যাট্রিয়ট পাঠাব, ওরা এগুলো একেবারে জরুরি ভিত্তিতে চাইছে,” বলেন ট্রাম্প, মেরিল্যান্ডের জয়েন্ট বেস অ্যান্ড্রুজ-এ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে। “সংখ্যাটা এখনও ঠিক করিনি, কিন্তু কিছু ওদের দিতেই হবে, কারণ ওদের সুরক্ষা দরকার।”
ট্রাম্প প্রকাশ্যে পুতিনের যুদ্ধ-ব্যবস্থাপনার প্রতি অসন্তোষ জানিয়ে বলেন, “আমি প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রতি খুবই হতাশ। আমি ভাবতাম, উনি যা বলেন, তা করেন। ওঁর কথা খুব সুন্দর, কিন্তু তারপর রাতের আঁধারে বোমা ফেলেন—আমি এটা পছন্দ করি না।” রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মুখে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির একাধিকবার অনুরোধের পর এবার যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে উন্নত সামরিক প্রযুক্তি দিতে রাজি হয়েছে। ট্রাম্প বলেন, কিয়েভকে “খুব উন্নত সামরিক সরঞ্জাম” সরবরাহ করা হবে এবং এর জন্য “তারা ১০০ শতাংশ মূল্য পরিশোধ করবে।”
Axios–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউক্রেনের জন্য একটি “আক্রমণাত্মক” নতুন সামরিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করতে যাচ্ছেন, যার মধ্যে এমন অস্ত্র থাকবে যা রাশিয়ার অভ্যন্তরে গভীর আঘাত হানতে সক্ষম, এমনকি মস্কোতেও। এই নীতিগত পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম কারণ হলো ৩ জুলাই ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে হওয়া একটি ফোনালাপ, যেখানে পুতিন জানান তিনি সংঘাত আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন। নতুন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেন, “আগামীকাল কী হয়, দেখা যাক।”
আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আসছে
রবিবারই মার্কিন সিনেটররা একটি দ্বিদলীয় বিল উত্থাপন করেছেন, যা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে মস্কোর ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টির ক্ষমতা দেবে। প্রস্তাবিত এই আইন অনুযায়ী, রাশিয়াকে সহায়তাকারী দেশগুলোর ওপর ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা যাবে। এতে চীন, ভারত ও ব্রাজিলের ওপরও প্রভাব পড়তে পারে। “এটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হাতে একটি হাতুড়ি তুলে দিচ্ছে, যা দিয়ে তিনি এই যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেন,” বলেন রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম। “এতে পুতিনের অর্থনীতিকে টার্গেট করার সুযোগ থাকবে, এমনকি সেই দেশগুলোকেও যারা পুতিনের যুদ্ধযন্ত্রকে সমর্থন করছে।” ট্রাম্প শুরুর দিকে শান্তি প্রতিষ্ঠার আশা নিয়ে নিষেধাজ্ঞা কঠোর করেননি। কিন্তু রাশিয়ার লাগাতার আগ্রাসনে তাঁর ধৈর্য ভেঙে পড়েছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হলেও ২০২৫ সালে গিয়ে তা আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ক্রমাগত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার মাধ্যমে রাশিয়া ইউক্রেনের অবকাঠামো ও নাগরিক এলাকাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করছে। ইউক্রেনও পাল্টা প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে, পশ্চিমা সামরিক সহায়তার ওপর ভরসা রেখে। সাম্প্রতিক মার্কিন সহায়তা প্যাকেজ এবং প্যাট্রিয়ট সিস্টেম পাঠানোর ঘোষণা যুদ্ধকে নতুন মাত্রা দিতে পারে। যুদ্ধক্ষেত্রে স্থবিরতা থাকলেও কূটনৈতিক সমাধানের কোনো আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি নেই। ফলে এই সংঘাত শুধু ইউক্রেন নয়, গোটা ইউরোপ ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য এক দীর্ঘমেয়াদি হুমকি হয়ে উঠছে।
