আজকাল ওয়েবডেস্ক: আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম (ইন্ডিপেনডেন্ট) বা আলফা (স্বাধীন) রবিবার (১৩ জুলাই) দাবি করেছে, মায়ানমার সীমান্তবর্তী তাদের ঘাঁটিতে ভারতীয় সেনাবাহিনী ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় সংগঠনের তিন শীর্ষস্থানীয় নেতা নিহত হয়েছেন বলেও তারা জানিয়েছে। সরকারি সূত্র জানিয়েছে, “ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এই ধরনের কোনও অপারেশন চালানো হয়নি।” তবে আলফা-আই এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ড্রোন ও মিসাইল হামলার মাধ্যমে তাদের ঘাঁটিগুলি টার্গেট করা হয় এবং এই হামলায় কমান্ডার নয়ন মেধি-সহ তিন শীর্ষনেতা নিহত হয়েছেন।
এই হামলা মূলত ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কাউন্সিল অফ নাগাল্যান্ড (খাপলাং) বা NSCN-K-এর মায়ানমার সীমান্তবর্তী একটি ঘাঁটিতে হয় বলে সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। যদিও এই ঘাঁটিতে আলফা, মণিপুরের নিষিদ্ধ সংগঠন পিপলস লিবারেশন আর্মি (PLA)-সহ আরও কিছু গোষ্ঠীর অস্তিত্ব রয়েছে। পরবর্তী একটি বিবৃতিতে আলফা-আই আরও দাবি করে যে, একাধিক ধাপে এই হামলা হয়েছে। প্রথম দফার হামলায় নিহত হন ব্রিগেডিয়ার গনেশ আসাম ও কর্নেল প্রদীপ আসাম। সংগঠনের বিবৃতিতে বলা হয়, “যখন নয়ন আসাম-এর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হচ্ছিল, ঠিক সেই সময় ফের মিসাইল হামলা চালানো হয়। এতে গনেশ আসাম ও প্রদীপ আসাম শহিদ হন। বেশ কিছু অফিসার, ক্যাডার এবং আশপাশের সাধারণ মানুষও আহত হয়েছেন।”
এখনও পর্যন্ত ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বা সেনাবাহিনীর তরফে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি। বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, ২০২৪ সালের শেষ দিক থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোর কার্যকলাপ বেড়েছে। আলফা-আই দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলন চালিয়ে আসছে। ভারত সরকারের সঙ্গে আলফার মূল সংগঠনের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে যখন শান্তি উদ্যোগ কিছুটা এগোয়, তখন থেকেই আলফা-আই নিজেদের 'স্বাধীন আসামের' দাবি নিয়ে আরও উগ্রপন্থী হয়ে ওঠে।
মায়ানমারে বহু বছর ধরেই আলফা, এনএসসিএন, কেএলও ও পিএলএ-এর মতো উত্তর-পূর্ব ভারতের একাধিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ঘাঁটি গড়ে উঠেছে। মায়ানমারের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সেনাশাসনের সুযোগ নিয়ে এরা সেদেশের দুর্গম এলাকায় নিজেদের অবস্থান মজবুত করেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী অতীতে একাধিকবার মায়ানমার সীমান্তে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছে, বিশেষ করে ২০১৫ সালে মণিপুরে জঙ্গি হামলার পর। তবে এবার সেনাবাহিনী ‘অপারেশন নেগেট’ বা তেমন কিছু অভিযানের কথা অস্বীকার করলেও, ঘন জঙ্গল ঘেরা দুর্গম অঞ্চলে গোপনে ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলার পেছনে ভারত যদি সরাসরি না-ও থাকে, তবুও মায়ানমারের সেনাবাহিনী বা অন্য কোনও পক্ষ এমন হামলা চালিয়ে থাকতে পারে ভারতের সামরিক সহযোগিতায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই হামলার পর সীমান্ত অঞ্চলে উত্তেজনা বেড়েছে এবং আশপাশের অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। আলফার তরফে শহিদ নেতাদের স্মরণে প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে খবর।
এই ঘটনার ফলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শান্তিপ্রক্রিয়া নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
