আজকাল ওয়েবডেস্ক: মাওবাদবিরোধী অভিযান ঘিরে ছত্তিসগড়ে এক বড় সাফল্য এল নিরাপত্তা বাহিনীর ঝুলিতে। শনিবার সুকমা জেলায় আত্মসমর্পণ করল মোট ২৩ জন মাওবাদী, যাঁদের উপর মোট ১.১৮ কোটি টাকার পুরস্কার ঘোষণা করা ছিল। পুলিশের দাবি, আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে রয়েছেন একাধিক শীর্ষস্থানীয় মাওবাদী নেতা, যাঁদের মাথার দাম ছিল ৮ লক্ষ টাকা করে। এছাড়াও অনেকের ওপর ১ থেকে ৫ লক্ষ টাকার পুরস্কার ছিল।
এই আত্মসমর্পণ পর্বটি হয়েছে সুকমার জেলা পুলিশ ও কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনী (CRPF)-এর যৌথ উদ্যোগে। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় সুকমা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুকমার এসপি কিরণ চবন এবং CRPF-এর ডেপুটি আইজি আনন্দ সিং। আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের মধ্যে রয়েছেন এমন একজন যিনি ২০১২ সালে তৎকালীন জেলা শাসক অ্যালেক্স পল মেননের অপহরণে যুক্ত ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
এই অভিযান সফল করতে ভূমিকা নিয়েছে সুকমা জেলা পুলিশ, CRPF-এর ২য়, ২২৩তম, ২২৭তম এবং ১৬৫তম ব্যাটেলিয়ন, এবং কোবরা (CoBRA)-এর ২০৪তম ও ২০৮তম ইউনিট। আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের রাজ্যের পূনর্বাসন নীতির অধীনে আর্থিক ও সামাজিক সহায়তা প্রদান করে মূলস্রোতে ফেরানো হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।
বস্তার রেঞ্জের পুলিশ ইন্সপেক্টর জেনারেল সুন্দররাজ পি বলেন, “এটি আমাদের নিরলস শান্তি ও পুনর্বাসন প্রচেষ্টার সুফল। যারা এখনও অরণ্যে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের জন্য সরকার আত্মসমর্পণের দরজা খোলা রেখেছে। সম্মান ও সুযোগ সহকারে সমাজে পুনর্বাসনের জন্য একটি সুগঠিত নীতি রয়েছে।”
এই ঘটনাটি এমন সময়ে ঘটল, যখন বস্তার অঞ্চলে মাওবাদীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর একাধিক সংঘর্ষে কয়েকজন কুখ্যাত মাও নেতা নিকেশ হয়েছে। গত মাসেই নারায়ণপুর জেলায় নিরাপত্তা বাহিনী ও মাওবাদীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ৭ জন মাওবাদী নিহত হয়। তার আগে বিজাপুরে একটি গোপন অভিযানে ১২ জন মাওবাদীর মৃত্যু হয়। এমনকী জুন মাসে কান্তাপাড়া এলাকায় একটি এনকাউন্টারে ‘মিলিটারি কোম্পানি ২’-এর শীর্ষ নেতা রমেশ ওরফে শঙ্কর নিহত হয়, যাঁর উপর ২০ লক্ষ টাকার পুরস্কার ছিল।
এই সমস্ত সংঘর্ষ ও আত্মসমর্পণ মিলিয়ে স্পষ্ট, ছত্তিসগড়ের বস্তার অঞ্চলে মাওবাদী প্রভাব ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে। একদিকে যেমন নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান জোরদার করছে, অন্যদিকে রাজ্য সরকারের পুনর্বাসন নীতিও বহু মাওবাদীকে অস্ত্র ত্যাগ করতে উদ্বুদ্ধ করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ‘ডবল অ্যাকশন’—দমন ও পুনর্বাসন—এগিয়ে নিয়ে চলেছে বস্তার অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের রাজ্য সরকারের আত্মসমর্পণ ও পুনর্বাসন নীতির আওতায় আনা হবে। এই নীতির মাধ্যমে তাঁদের আর্থিক ও সামাজিক সহায়তা প্রদান করে মূলস্রোতের সমাজে সম্মানজনকভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। শেষমেশ প্রশ্ন উঠছে—এই প্রবণতা কি সত্যিই দীর্ঘস্থায়ী হবে? নাকি আবার মাওবাদীরা ছায়া থেকে ফিরে আসবে? তবে আপাতত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে প্রশাসন।
