আজকাল ওয়েবডেস্ক:  দূরপাল্লার ট্রেনে সাধারণ টয়লেট থাকে। ফলে সেখান থেকে যাত্রীরা নিজেদের প্রয়োজন সারতে পারেন। ভারতীয় রেল সেখানে প্রতিটি যাত্রীর জন্য সমস্ত ধরণের ব্যবস্থা করেছেন। 


যদি দূরে যেতে চান তাহলে সেখানে যাত্রীদের জন্য এসি কোচে থাকে বিশেষ ওয়াররুম। কিন্তু এতসবের মধ্যে এটা কেউ ভেবে দেখেছেন রেলের ইঞ্জিন বগিতে যারা ঘন্টার পর ঘন্টা ট্রেন চালিয়ে যান তাহলে তাদের কী পরিস্থিতি তৈরি হয়। তারা কীভাবে নিজেদের টয়লেট সারেন।


নিয়ম অনুসারে লোকো পাইলটরা ট্রেন শুরু হওয়ার আগে স্টেশনে গিয়ে টয়লেট সেরে নেন। কারণ তারা জানেন এরপর প্রায় ২ থেকে ৩ ঘন্টা তারা এই কাজটি আর করতে পারবেন না। যাত্রীদের যাতে নিজের গন্তব্যে যেতে দেরি না হয় সেদিকেও তাদের নজর থাকে। 


তাই ট্রেন শুরু করার আগে লোকো পাইলটরা নিজেদেরকে একেবারে ফ্রেস করে নেন। এরফলে তারা সহজেই অনেক সময় ধরে ট্রেনের ইঞ্জিনে বসতে পারেন। ট্রেনের ইঞ্জিনে কোনও ওয়াশরুম থাকে না। যদি হঠাৎ করে এমন কোনও সমস্যা তৈরি হয় তাহলে লোকো পাইলট নেটি কন্ট্রোল রুমে দ্রুত জানিয়ে দেন। ফলে সেখানে কাছের কোনও স্টেশনে ট্রেনটিকে জরুরিকালীনভাবে থামিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে গিয়ে লোকো পাইলট নিজের কাজটি সেরে নিতে পারেন। তবে এই ঘটনা সহজে ঘটে না।


বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এক থেকে দুই ঘন্টার মধ্যে স্টেশন চলে আসে। সেখানে গিয়ে লোকো পাইলটরা নিজেদের কাজ সারেন। তবে রাজধানী, গরিব রথ বা দুরন্তর ক্ষেত্রে সেটি সহজে হয় না। পাশাপাশি রাতের দিকের ট্রেনগুলিতেও এই ঘটনা সহজে হয় না। সেখানে লোকো পাইলট দ্রুত কন্ট্রোল রুমে জানান এবং ট্রেনটিকে কাছের কোনও স্টেশনে থামিয়ে দেন। তবে তারা কন্ট্রোল রুমের অনুমতি ছাড়া ট্রেন থামাতে পারেন না। সেখানে কন্ট্রোল রুম যদি গ্রিন সিগন্যাল দেয় তবেই এই কাজটি তারা করতে পারেন।


ভারতীয় রেলওয়ে সম্প্রতি ট্রেন সুরক্ষায় একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। রেল এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে রিয়েল-টাইমে দুর্ঘটনা প্রতিরোধের দিকে মনোনিবেশ করছে। এই নতুন ব্যবস্থাগুলি ভারতীয় রেলকে আরও নিরাপদ এবং দক্ষ করে তোলার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। সঠিক ভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার শুরু হলে রেল দুর্ঘটনা অনেক হারে কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।


ভারতীয় রেলওয়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য AI-ভিত্তিক সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলির মধ্যে একটি হল দেশে তৈরি "কবচ" সিস্টেম। এটি একটি স্বয়ংক্রিয় ট্রেন সুরক্ষা ব্যবস্থা, যা সর্বোচ্চ স্তরের নিরাপত্তা সার্টিফিকেশন পর্যন্ত পেয়েছে। "কবচ" লোকো পাইলটকে নির্দিষ্ট গতিসীমার মধ্যে ট্রেন চালাতে সহায়তা করে এবং যদি লোকো পাইলট তা করতে ব্যর্থ হন, তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্রেক প্রয়োগ করে। খারাপ আবহাওয়ার মধ্যেও ট্রেনকে নিরাপদে চলতে এটি বিশেষভাবে সহায়ক।

আরও পড়ুন:   ধেয়ে আসছে প্রলয়, শক্তি কয়েক হাজার পরমাণু বোমার সমান, এবার কী হবে


দেরাদুনের মোতিচুর-রাইওয়ালা ১৫ কিমি রেলপথে এই AI-চালিত সিস্টেম স্থাপন করা হচ্ছে। ফাইবার অপটিক্স এবং ডিস্ট্রিবিউটেড অ্যাকোস্টিক সেন্সিং ব্যবহার করে এটি প্রাণীদের গতিবিধি সনাক্ত করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে স্টেশন মাস্টার, লোকো পাইলট এবং বন কর্মীদের সতর্ক করে।
ভারতীয় রেলওয়ে এবং ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড (DFCCIL) সম্প্রতি AI/ML-ভিত্তিক পরিদর্শন ব্যবস্থার জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এই সিস্টেমটি চলমান ট্রেনের নীচের অংশের হাই-রেজোলিউশন ছবি তুলে ঝুলে থাকা, আলগা বা অনুপস্থিত যন্ত্রাংশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সনাক্ত করতে পারে এবং অনিয়ম সনাক্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক করে।


সেন্সর ডেটা এবং মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে রেলওয়ে ট্র্যাকের অবস্থা ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ করা হয়, অস্বাভাবিকতা সনাক্ত করা হয় এবং প্রয়োজনে রক্ষণাবেক্ষণের সময়সূচী তৈরি করা হয়। এটি ট্র্যাকের জীবনকাল বাড়ায় এবং ট্রেনের লাইনচ্যুত হওয়ার ঝুঁকি কমায়।