আজকাল ওয়েবডেস্ক: মৃত্যুদণ্ড মানব ইতিহাসের অন্যতম ভয়ঙ্কর ও কঠোর শাস্তি। তবে এই শাস্তির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িয়ে আছে এক বিশেষ মানবিক আচার—কার্যকরের আগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীর শেষ ইচ্ছা পূরণের সুযোগ দেওয়া। সিনেমা, ধারাবাহিক কিংবা সংবাদে আমরা এ দৃশ্য প্রায়ই দেখি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন বন্দীকে এমন সুযোগ দেওয়া হয়? আবার কবে থেকে এর শুরু?
ইংল্যান্ড থেকে বিশ্বে বিস্তার
ইতিহাসবিদদের মতে, এই প্রথার সূত্রপাত ১৮শ শতকের ইংল্যান্ডে। তখন মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে বন্দীকে নিজের শেষ ইচ্ছা জানানোর সুযোগ দেওয়া হতো। ধীরে ধীরে তা ইউরোপের অন্যান্য দেশে এবং পরে এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে, যার মধ্যে ভারতও রয়েছে। যদিও নির্দিষ্ট প্রমাণ মেলে না, তবু এটি সহানুভূতির প্রতীকী প্রথা হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন: এই ঘুমই চিরনিদ্রা নয় তো? ঘুমের মধ্যে দ্বিগুণ বেড়ে যায় হৃদরোগের আশঙ্কা! কীভাবে রক্ষা পাবেন?
অনেক প্রাচীন বিশ্বাসে বলা হয়, মৃত্যুর আগে কারও শেষ ইচ্ছা পূরণ করা হলে তার আত্মা শান্তি লাভ করে। আর ইচ্ছা অপূর্ণ থাকলে আত্মা নাকি অশান্ত থেকে যায়। ধর্মীয় আচার এবং মানবিক অনুভূতির মিলনেই এ প্রথা সমাজে টিকে আছে। যদিও কোথাও এটি আইনত বাধ্যতামূলক নয়।
ভারতের কারা আইনে বন্দীর শেষ ইচ্ছা পূরণের কোনও নির্দেশ নেই। সরকারি কারা-ম্যানুয়ালেও এর উল্লেখ নেই। তবু এটি একরকম অলিখিত রীতি হিসেবে অনুসৃত হয়ে আসছে। কারা কর্তৃপক্ষ মানবিকতা ও সামাজিক মূল্যবোধের জায়গা থেকে বন্দীর শেষ ইচ্ছা পূরণের চেষ্টা করেন।
কোন ইচ্ছা পূরণ হয়?
সব ইচ্ছাই পূরণ করা হয় না। মৃত্যুদণ্ড বাতিল বা স্থগিত রাখার অনুরোধ অবশ্যই অগ্রাহ্য হয়। বাস্তবায়নযোগ্য ইচ্ছাই মেনে নেওয়া হয়—যেমন প্রিয় খাবার খাওয়া, পরিবারের সঙ্গে দেখা, ধর্মীয় গুরু বা পুরোহিত ডেকে আনা, প্রার্থনা করা কিংবা ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা। তবে সময়সাপেক্ষ বা অসম্ভব অনুরোধ, যেমন দূরের আত্মীয় ডাকা, সাধারণত মেনে নেওয়া হয় না। অধিকাংশ দেশে মৃত্যুদণ্ড ভোরবেলায় কার্যকর করা হয়, যাতে জেলখানার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত না হয়। ভারতে স্পষ্ট বলা আছে—শেষ ইচ্ছা পূরণ বাধ্যতামূলক নয়, বরং এটি একটি মানবিক ঐতিহ্য।
শেষ ইচ্ছা পূরণের মূল লক্ষ্য হলো বন্দীর মানসিক যন্ত্রণা কিছুটা কমানো। মৃত্যুদণ্ড ভয়ঙ্কর শাস্তি হলেও সামান্য ইচ্ছা পূরণ বন্দীকে শেষ মুহূর্তে মর্যাদা ও স্বস্তি দেয়। যুক্তরাষ্ট্রে ‘লাস্ট মিল রিকোয়েস্ট’ বা শেষ খাবারের অনুরোধ বহুল প্রচলিত, যদিও রাজ্যভেদে এর ওপর সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
অমানবিক শাস্তির মাঝেও শেষ ইচ্ছা পূরণের এই প্রথা সমাজের এক ক্ষুদ্র মানবিক প্রয়াস। মৃত্যুর আগে হলেও বন্দীর প্রতি সহানুভূতির এই দৃষ্টান্ত মানবসভ্যতার ইতিহাসে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
