আজকাল ওয়েবডেস্ক: আসামের নাগাঁও জেলায় বিদেশি চিহ্নিত করার প্রশ্নে ফের চাঞ্চল্য ছড়াল। বিভিন্ন ফরেনার্স ট্রাইবুনাল (বিদেশি বিচার ট্রাইবুনাল) নাগাঁও জেলার মোট ১৫ জন ব্যক্তিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিদেশি’ ঘোষণা করার পর জেলা প্রশাসন তাঁদের বিরুদ্ধে বহিষ্কার আদেশ  জারি করেছে। ইমিগ্রান্টস (এক্সপালশন ফ্রম আসাম) অ্যাক্ট, ১৯৫০ অনুযায়ী এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদপত্র দ্য আসাম ট্রিবিউন।

প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ফরেনার্স ট্রাইবুনালের সামনে নিজেদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এই ১৫ জন নাগাঁও জেলার বিভিন্ন থানার অধীন গ্রামগুলির বাসিন্দা যার মধ্যে রয়েছে রাহা, কলিয়াবর, সামাগুড়ি ও রূপাহী থানা এলাকা। নাগাঁওয়ের সিনিয়র সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ (এসপি) গত ১৭ নভেম্বর একটি চিঠি পাঠানোর পরই এই মামলাগুলি সক্রিয়ভাবে প্রক্রিয়াধীন হয়।

সাম্প্রতিক বহিষ্কারাদেশে স্পষ্টভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, নোটিশ  হাতে পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যেককে ভারতীয় ভূখণ্ড ত্যাগ করতে হবে। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে দেশ না ছাড়লে প্রশাসন এবং নিরাপত্তা বাহিনী জোর করে  তাঁদের আসাম ও ভারত থেকে অপসারণ করতে পারবে বলেও আদেশে উল্লেখ রয়েছে।

জেলা প্রশাসনের জারি করা নির্দেশে আরও বলা হয়েছে, এই বহিষ্কার কার্যকর করতে জেলা পুলিশ, সীমান্ত রক্ষী বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক আধিকারিকদের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই ১৫ জনের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে, আধার কার্ড বাতিল করতে এবং ভবিষ্যতে যাতে কোনও সরকারি প্রকল্প বা সুবিধা তাঁদের দেওয়া না হয়, তা নিশ্চিত করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

এই ঘটনার মধ্যেই আলাদা একটি ঘটনায় নাগাঁও জেলার দিঘালি আটি গ্রামের বাসিন্দা হুসেন আলিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, কোনও ফরেনার্স ট্রাইবুনালের নোটিশ  বা নির্দিষ্ট কারণ না জানিয়ে তাঁকে আটক করা হয়েছে। হুসেন আলির স্ত্রী বলেন,
“আমরা বহু বছর ধরে এখানেই আছি। সন্দেহের বশে আমার স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, কিন্তু ও এখানকারই মানুষ।”

আইনি লড়াইয়ে নামতে বাধ্য হয়ে হুসেন আলি ইতিমধ্যেই গৌহাটি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁর আবেদনে দাবি করা হয়েছে, ট্রাইবুনালের কোনও নোটিশ  বা শুনানির সুযোগ না দিয়েই তাঁকে আটক করা হয়েছে, যা আইনবিরুদ্ধ এবং মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।

নাগাঁওয়ে একের পর এক বিদেশি চিহ্নিতকরণ, দ্রুত বহিষ্কার  এবং গ্রেপ্তারের ঘটনায় এলাকায় উদ্বেগ ও আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলির  মতে, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ও স্বচ্ছতা বজায় না থাকলে এই ধরনের পদক্ষেপ গুরুতর সামাজিক ও মানবিক সংকটের জন্ম দিতে পারে।