আজকাল ওয়েবডেস্ক: দৈনন্দিন জীবনে এমন অনেক কিছুই ঘটে যা হয়তো সচেতন ভাবে আমরা অতটা পাত্তা দিই না। কিন্তু তার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে নানা জৈবিক সঙ্কেত। মলত্যাগ তেমনই একটি বিষয়। এই দৈনন্দিন প্রাকৃতিক ক্রিয়াই অনেক সময় শরীর সম্পর্কে চুপিচুপি কিছু বার্তা দিয়ে দেয়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, কখনও কি লক্ষ্য করেছেন মলত্যাগের পর সেই বিষ্ঠা কমোডের জলে ভাসছে না সোজা নিচে ডুবে যাচ্ছে? বিজ্ঞান কিন্তু বলছে, মল জলে ডুবে যাওয়া নিছকই দৈব ঘটনা নয়। বরং এর মাধ্যমে শরীর কিছু বলার চেষ্টা করছে।

মল ডুবে যাওয়ার মানে কী?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মলের ঘনত্ব এবং ভর নির্ভর করে মূলত তার উপাদানের উপর। যদি মলে ফাইবারের পরিমাণ কম হয় এবং তাতে বাতাস বা গ্যাসের পরিমাণও কম থাকে, তাহলে সেই মল ঘন ও ভারী হয়ে যায় এবং জলে ডুবে যায়। অর্থাৎ, ডুবে যাওয়া মল মানেই মলের মধ্যে ফাইবার কম এবং জলীয় অংশও তুলনামূলকভাবে কম।
আরও পড়ুন: ভাইরাল ‘আপত্তিকর’ ভিডিও! দশ নায়িকার গোপন মুহূর্ত ফাঁস হওয়ায় কম্পন বলিউডে
একজন সাধারণ সুস্থ মানুষের মল সাধারণত হালকা হয় এবং কিছুটা ভেসে থাকে। যদি নিয়মিত মল কমোডের সাইফনে জমা ডুবে যায়, তবে তার নেপথ্যে বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে।
১. ফাইবারের ঘাটতি: খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত ফল, শাকসবজি, বাদাম বা শস্যজাত ফাইবার না থাকলে মল শক্ত ও ঘন হয়ে যায়। এই ঘনত্বই তাকে জলে ডুবিয়ে দেয়।২. জল খাওয়ার অভাব: সারাদিন কম জল পান করলে খাবার অন্ত্রের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় খাবার থেকে শরীর বেশি বেশি পরিমাণে জল শুষে নেয়, ফলে মল আরও কঠিন ও ভারী হয়ে যায়।
৩. হজমের সমস্যা: আমরা অনেক সময় তাড়াহুড়োতে ভাল করে খাবার চিবিয়ে খাই না। আবার কখনও কখনও এমন কিছু খেয়ে ফেলি যা হজম করা কঠিন। এহেন খাদ্য যদি সম্পূর্ণরূপে হজম না হয়, তবে তা মলে পরিণত হয়ে ভারী হয়ে যেতে পারে। এই ক্ষেত্রেও মল জলে ডুবে যায়।
৪. পুষ্টির অভাব বা অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: প্রসেসড ফুড বা জাঙ্ক ফুডে ফাইবার খুবই কম থাকে। অন্যদিকে এই ধরনের খাবারে প্রচুর ক্যালোরি থাকে কিন্তু পরিপাকতন্ত্রকে সাহায্য করে এমন উপাদান থাকে না। ফলে খাবার হজম হয় না এবং মল ভারী হয়।
৫. হজমের সমস্যার ইঙ্গিত: যদি পাচনতন্ত্রে কোনও অসুবিধা থাকে, কিংবা তাতে গ্যাস না তৈরি হয়, তাহলে মলে বাতাসের পরিমাণ কমে যায়। সেটাও মল ডুবে যাওয়ার কারণ হতে পারে।
ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন কখন?
যদি মাঝে মাঝে মল ডুবে যায়, চিন্তার কিছু নেই। তবে যদি দেখা যায়, দিনের পর দিন একই ঘটনা ঘটছে বা তার সঙ্গে পেটে ব্যথা, অম্বল, অস্বস্তি, বা হঠাৎ ওজন কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিচ্ছে তখন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বিশেষত মলের যদি রঙ খুব গাঢ় বা কালচে হয়, অথবা মলে রক্তের ছাপ থাকে, তাহলে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল সমস্যা বা রক্তপাতের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

সমাধান কী?
দেহ সুস্থ রাখতে দিনে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম ফাইবার খাওয়া উচিত। প্রতিদিন ২.৫ থেকে ৩ লিটার জল খাওয়ার অভ্যেস গড়ে তুলতে হবে। সঙ্গে হাঁটা, হালকা ব্যায়াম ও দুশ্চিন্তা কমানো এগুলিও হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। সব মিলিয়ে আপনার মল ডুবছে না ভাসছে, সেটা যাচাই করা কোনও লজ্জার বিষয় নয়। বরং এটি শরীরের খেয়াল রাখার একটি সম্ভাব্য উপায়। সচেতন হলে অনেক বড় সমস্যা এড়ানো সম্ভব।