অনেক সময়ই টানা কাশি হলে তা ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব, অ্যালার্জি বা ক্ষণস্থায়ী ভাইরাল সংক্রমণের ক্ষতিকারক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে এই কাশি কখনও কখনও গুরুতর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। ডাঃ প্রবীণ কুমার বলেন (বিএস, কনসালটেন্ট-পালমোনোলজি)“আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ক্রমাগত কাশি কেবল একটি স্বাভাবিক ঋতুগত ঘটনা নয়। কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিস, যক্ষ্মা, ইন্টারস্টিশিয়াল ফুসফুসের রোগ, এমনকি প্রাথমিক পর্যায়ের ফুসফুসের ক্যানসারের মতো রোগের ইঙ্গিত দিতে পারে।”
পালমোনোলজিস্ট ডাঃ জন মুচাহারী আরও বলেন, "প্রাপ্তবয়স্কদের আট সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি দীর্ঘস্থায়ী বলে বিবেচিত হয় এবং এটি উপেক্ষা করা উচিত নয়, কারণ এটি ফুসফুসের ম্যালিগন্যান্সি বা ইন্টারস্টিশিয়াল ফুসফুসের রোগ-সহ আরও ভয়ঙ্কর কিছুর প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।"
চিকিৎসকের মতে, দু’সপ্তাহের বেশি কাশি থাকলে সতর্ক হতে হবে। বিশেষ করে ক্লান্তি, ওজন হ্রাস, শ্বাসকষ্ট, বুকে অস্বস্তি বা গলা ভাঙলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ধূমপায়ীদের জন্য, দীর্ঘস্থায়ী কাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ সঙ্কেত হতে পারে। ডাঃ প্রবীণ কুমার বলেন, "যাঁরা ধূমপান করে, তাঁদের তিন সপ্তাহের বেশি কাশি হলে ফুসফুসের ক্যানসার হয়েছে কি না, তা জানতে টেস্ট করা প্রয়োজন।" কাশির প্রকৃতির পরিবর্তন, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, কাশির সাথে রক্ত পড়া, গলা ভাঙা ওজন বা খিদে হ্রাস হলে সতর্ক হতে হবে।
ফুসফুসের ক্যানসার প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় হল কম-ডোজ কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি (LDCT)। "LDCT স্ক্যানের সময়, একটি টেবিলের উপর শুতে হয় এবং একটি এক্স-রে মেশিন ফুসফুসের ছবি তোলার জন্য কম মাত্রার রেডিয়েশন ব্যবহার করে," ডাঃ প্রবীণ কুমার ব্যাখ্যা করেন। মাত্র কয়েক মিনিটে স্ক্যানটি হয়ে যায়। এবং এটি করতে কোনও রকম ব্যথা হয় না।
কাশি উপেক্ষা করা উচিত নয়। যদিও ঋতু পরিবর্তন, অ্যালার্জি এবং দূষণ প্রায়শই এর জন্য দায়ী হতে পারে। তবুও বড় কিছু আটকাতে সময় মতো চিকিৎসা প্রয়োজন। যাঁরা ধূমপান করেন, তাঁদের আরও সতর্ক থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: পুজোর আগেই থলথলে মেদ গলিয়ে চান করিনার মতো সুন্দর ফিগার! খুব সহজেই সম্ভব, টিপস দিয়েছেন নায়িকা স্বয়ং
ঋতু পরিবর্তনের কারণে কাশি সারানোর ঘরোয়া উপায় কী?
চিকিৎসক পীযূষ মহেশ্বরী বলেন, মধু এবং আদা খাওয়া সর্দি-কাশির জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে। আদার অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা শরীর থেকে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে, অন্যদিকে মধুতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা গলা প্রশমিত করে এবং কাশি কমায়। মধুর সঙ্গে আদার রস মিশিয়ে তা গরম জলের সঙ্গে খেতে পারেন। এটি কেবল কাশি থেকে মুক্তি দেয় না, সর্দিও সারিয়ে তোলে।
সর্দি-কাশির জন্য চমৎকার ঘরোয়া প্রতিকার তুলসি এবং লবঙ্গ। তুলসিতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, অন্য দিকে লবঙ্গের অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য আছে। এগুলি একসঙ্গে ফুটিয়ে একটি পানীয় তৈরি করে দিনে দু’থেকে তিনবার খেলে গলার ফোলাভাব কমাতে, কাশি থেকে মুক্তি পেতে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে। এই প্রতিকারটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও শক্তিশালী করে।
