আজকাল ওয়েবডেস্ক: 'চ'-এ চরিত্র, 'চ'-এ গঠনতন্ত্র'ও....! মহিলাঘটিত অভিযোগ যেন সিপিএমের নেতাদের জন্য এখন আলাদা করে আর কোনও ‘বিরোধী ষড়যন্ত্র’ নয়, বরং প্রায় নিয়মিত রাজনৈতিক অনুষঙ্গ। রাজ্য কমিটির বৈঠক, পার্টি কংগ্রেস, শ্রমিক আন্দোলন- সব কিছুর মাঝেই ঘুরেফিরে হাজির হচ্ছে একই প্রশ্ন: দল  চালানো হচ্ছে, না তদন্ত কমিটি?

শুক্রবার রাজ্য কমিটির বৈঠকের শেষ দিনে সেই তালিকায় নতুন নাম যুক্ত হল এক সিটু নেতার। তরুণ, পরিচিত মুখ, আন্দোলনের ‘ফ্রন্টফেস’,সব মিলিয়ে যাঁকে নিয়ে এক সময় গর্ব করার কথা ছিল, তাঁকেই এবার গঠনতন্ত্রের ১৯(চ) ধারার তলায় ঠাঁই দিতে হল আলিমুদ্দিনকে।

ঘটনাটি আরও নাটকীয় এই কারণে যে, বহিষ্কারের ঘোষণা যখন করা হচ্ছে, তখন অভিযুক্ত নেতা নিজেই সভায় উপস্থিত। রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম অবশ্য কোনও আবেগ বা বিশ্লেষণে যাননি। সংক্ষেপে জানিয়ে দিয়েছেন, দলের অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি যা বলেছে, সেটাই চূড়ান্ত। দিল্লিও নাকি মাথা নেড়েছে।

অভিযুক্ত নেতার বক্তব্য? খুব জোরালো নয়। অনুযোগের সুরে নাকি তিনি বোঝাতে চেয়েছেন তাঁর কথা তেমন শোনা হয়নি, মাত্র একবার ডাকা হয়েছিল। তবে রাজ্য কমিটিতে যাঁদের সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা ছিল, তাঁরাও আশ্চর্যজনক ভাবে ‘নীরব বিপ্লব’-এ বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।

অভিযোগ এক নয়, বহু

বেলঘরিয়ার এক তরুণী সিপিএম কর্মীর অভিযোগ থেকেই শুরু। অভিযোগ, বিয়ের প্রতিশ্রুতি, তারপর সম্পর্ক, তারপর বিশ্বাসভঙ্গ। বাবা-মা দু’জনেই পার্টির সদস্য ফলে বিষয়টি আর ‘ব্যক্তিগত’ থাকেনি, পুরোপুরি রাজনৈতিক হয়ে ওঠে।

তদন্ত করতে গিয়ে কমিটি নাকি জানতে পেরেছে এটা শুধু একটি ঘটনা নয়। একের পর এক সাক্ষ্য সামনে এসেছে। যাঁরা সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাঁরাও বেশির ভাগই রাজনৈতিক পরিসরের মানুষ। অর্থাৎ আন্দোলনের মঞ্চ, সংগঠনের অফিস, সবই নাকি হয়ে উঠেছিল ‘ঘনিষ্ঠতার ক্ষেত্র’।

ভাঙড়ের ভূমিপুত্র হলেও বহিষ্কৃত নেতার রাজনৈতিক বাসস্থান ছিল মূলত কলকাতাতেই। এসএফআই, ডিওয়াইএফআই পেরিয়ে সিটু, এরপর চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনে ‘পরিচিত মুখ’। অভিযোগ উঠেছে, সেই আন্দোলনের সম্পর্কও নাকি অনেক সময় আদর্শ ছাপিয়ে অন্য দিকে মোড় নিয়েছে।

পার্টি কংগ্রেস চলাকালীনই ‘স্ক্রিনশট রাজনীতি’

গত এপ্রিল মাসে মাদুরাইয়ে পার্টি কংগ্রেস চলাকালীন, যখন নেতৃত্ব জাতীয়-আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে  ব্যস্ত, তখনই সমাজমাধ্যমে ভেসে ওঠে কিছু স্ক্রিনশট, কিছু টেক্সট মেসেজ যা আর চেপে রাখা যায়নি কোনওভাবেই। তত দিনে অবশ্য তদন্ত শুরু হয়ে গিয়েছিল,এমনটাই দাবি দলের।

বেলঘরিয়ার মূল অভিযোগকারিণী এক সময় মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন বলেও খবর। কিন্তু দলের অন্দরে তখন অন্য চিন্তা- এ বার আবার কে?

তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে

পরিসংখ্যান বলছে, গত দেড় বছরে মহিলাঘটিত অভিযোগে সিপিএমকে চার জন ‘বড় নাম’-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। সুশান্ত ঘোষ, তন্ময় ভট্টাচার্য, বংশগোপাল চৌধুরী, এবং এখন এই সিটু নেতা। এছাড়াও উঠে আসছে কলকাতা জেলার যুব সংগঠনের এক শীর্ষ নেতার প্রসঙ্গ'ও. যার বিরুদ্ধে আবার মদ্যপ হয়ে মহিলা কর্মীদের মারধরের অভিযোগ রয়েছে। ২০২৫ শেষ হওয়ার আগেই তালিকাটা বেশ ভারী হয়ে উঠল।

দলের অন্দরের অনেকেই বলছেন, এই বহিষ্কার শুধু একজন নেতার পতন নয় বরং কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সংগঠনের জন্য এক রকম সতর্কবার্তা। কারণ, সেখানেও নাকি তদন্ত চলছে, ফাইল বন্ধ হয়নি।

সব মিলিয়ে প্রশ্নটা এখন আর কে অভিযুক্ত, তা নয়- পরেরটা কে?
আর লাল পতাকার নীচে আদর্শের সঙ্গে ব্যক্তিগত আচরণের এই টানাপোড়েন কত দূর গিয়ে থামবে, সেটাই এখন রাজনৈতিক মহলে সবচেয়ে বড় কৌতূহল।