শরীর ফিট রাখা থেকে মেদ ঝরানো, রোজ নিয়ম করে হাঁটার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। ডায়াবেটিস কিংবা রক্তচাপ অথবা কোলেস্টেরলের মতো একাধিক রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে হাঁটার অভ্যাস। তাই তো সারাদিনের ব্যস্ত রুটিনের মাঝে শরীরচর্চার সময় না পাওয়ার ঘাটতি হেঁটে পূরণ করতে চান অনেকে। শুধু শরীর নয়, হাঁটার অভ্যাস মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতেও কার্যকর, সম্প্রতি গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই তথ্য। বিশেষ করে, যদি বন্ধুর সঙ্গে মাত্র ১২ মিনিট হাঁটা যায়, তবে তা মস্তিষ্কে এমন পরিবর্তন ঘটায় যা আমাদের মেজাজ ভাল রাখতে, স্ট্রেস কমাতে এবং সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে সাহায্য করে।

মস্তিষ্কে কীভাবে কাজ করে হাঁটা? গবেষণা বলছে, হাঁটার সময় শরীরে হ্যাপি হরমোন অর্থাৎ সেরোটোনিন ও এন্ডোরফিন নিঃসৃত হয়। যা মস্তিষ্কের স্নায়ুর সংযোগকে আরও শক্তিশালী করে এবং মস্তিষ্কে ‘রিওয়্যারিং’ বা নতুন স্নায়বিক সংযোগ তৈরি করে। এর ফলে মানসিক চাপ কমে যায়, মুড ভাল হয় এবং এক ধরনের ইতিবাচক এনার্জি তৈরি হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একা হাঁটার চেয়ে বন্ধুর সঙ্গে হাঁটার প্রভাব অনেক বেশি। কারণ—

আরও পড়ুনঃ অনেকক্ষণ না খেলেও একেবারেই খিদে পায় না? প্রাণঘাতী অসুখের হাতছানি নয় তো! কতটা চিন্তার কারণ আছে?

স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ: হাঁটার সময় আলাপচারিতা কর্টিসলের মাত্রা কমিয়ে দেয়।

মুড বুস্টার: বন্ধু বা কাছের কারও সঙ্গে সময় কাটানো মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য থেরাপির মতো কাজ করে।

সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা: হাঁটার সময় সহজ কথোপকথন সম্পর্কের বন্ধন আরও দৃঢ় করে।

মনোযোগ ও সৃজনশীলতা: বন্ধুর সঙ্গে হাঁটলে নতুন ভাবনা, ভাবনা ও সৃজনশীল চিন্তার সুযোগ বাড়ে।

গবেষকরা জানান, দিনে মাত্র ১০–১২ মিনিটের হাঁটা, বিশেষত কাছের মানুষের সঙ্গে হাঁটলে মানসিক সুস্থতার ওপর দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি হতাশা ও উদ্বেগ কমানোর পাশাপাশি সামাজিক বন্ধনকে আরও শক্তিশালী করে। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, প্রতিদিন অন্তত একবার বন্ধুর সঙ্গে ১২ মিনিট হাঁটার চেষ্টা করুন। হাঁটার সময় মোবাইল ফোন থেকে দূরে থাকুন, প্রকৃতিকে উপভোগ করুন। অফিস বা পড়াশোনার চাপের মধ্যেও ছোট বিরতি নিয়ে হাঁটা মানসিকভাবে অনেক স্বস্তি আনে।

প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক আরও এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা কম হাঁটেন তাঁদের তুলনায় যারা প্রতিদিন কমপক্ষে ৭,০০০ পা হাঁটেন, তাঁরা অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি ৭০% পর্যন্ত কমাতে পারেন। ১১ বছরেরও বেশি সময় ধরে ২ হাজার জন মধ্যবয়সী মানুষকে নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে। যেখানে দেখা গিয়েছে, হাঁটলে মৃত্যুর ঝুঁকি কমে। তবে দ্রুত কিংবা ধীরে হাঁটা এক্ষেত্রে কোনও প্রভাব ফেলে না। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে প্রতিদিন ৭,০০০ স্টেপের বেশি, এমনকী ১০,০০০ বা তার বেশি পা হাঁটা মৃত্যুর ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। সার্বিক সুস্থতার উপর হাঁটার বড় ভূমিকা রয়েছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে কোনও বয়সের জন্যই ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট হাঁটা ভাল। ৬ থেকে ১৭ বছর বয়সিদের অন্তত এক ঘণ্টা এক্সারসাইজ অথবা ৩-৪ কিলোমিটার হাঁটা কিংবা খেলাধুলা করতে হবে।