খিদে পাওয়া সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ। তাই দীর্ঘক্ষণ না খাওয়ার পরও খিদে না পেলে তা বিভিন্ন অসুস্থতার লক্ষণ হতে পারে বলে মত চিকিৎসকদের। অনেক সময় শরীরে খিদে না পাওয়া বড় কোনও সমস্যার বিপদ সংকেত হতে পারে। চিকিৎসকরা বলছেন, যদি বারবার খিদে না পায় কিংবা খাওয়ার ইচ্ছা কমে যায়, তবে বিষয়টি অবহেলা করা উচিত নয়। এর পিছনে থাকতে পারে শারীরিক ও মানসিক নানা কারণ। 


* মানসিক চাপ: অতিরিক্ত স্ট্রেসের সময় শরীরে কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিন হরমোন নিঃসৃত হয়। এর ফলে হজম প্রক্রিয়া ধীর হয় এবং খিদে নষ্ট হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় এই অবস্থা থাকলে শরীরে অপুষ্টি দেখা দিতে পারে।


* সর্দি-জ্বর বা ফ্লু: ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শরীরে সাইটোকাইন নামক কেমিক্যাল তৈরি হয়, যা খিদে কমিয়ে দেয়। এর সঙ্গে ক্লান্তি ও ব্যথা যুক্ত হয়ে খাবারের প্রতি অরুচি বাড়ায়।

 

আরও পড়ুনঃ কাঁচা নাকি রান্না করা সবজি পুষ্টিকর? জানেন কোন সবজি কীভাবে খেলে পাবেন বেশি উপকার?


* গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে মর্নিং সিকনেস, বমিভাব ও অরুচির কারণে খাওয়ার ইচ্ছা থাকে না। এই সময় ছোট ছোট পরিমাণে সহজপাচ্য খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

* পাকস্থলীর সংক্রমণ: গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিসে আক্রান্ত হলে ডায়রিয়া, বমি ও পেটব্যথার পাশাপাশি খিদে চলে যায়। এই অবস্থায় জল ও তরল খাবার খাওয়া জরুরি।

* দীর্ঘস্থায়ী পাচনতন্ত্রের রোগ: আইবিএস, কোলাইটিস বা ক্রোনস ডিজিজের মতো সমস্যায় হজমে সমস্যা হয়। ফলে খাওয়ার প্রতি অনীহা দেখা দেয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ধরনের রোগ অবহেলা করা বিপজ্জনক।

* রক্তাল্পতা: আয়রন বা ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতির কারণে অ্যানিমিয়া হলে শরীরে ক্লান্তি, দুর্বলতা ও খিদে কমে যেতে পারে। সঠিক চিকিৎসা ও পুষ্টি গ্রহণ করা জরুরি।


* ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে পেট খালি হওয়ার প্রক্রিয়া ধীর হয়। এতে পেট ফাঁপা, অস্বস্তি ও খিদে কমে যায়। এক্ষেত্রে খাবার ও ওষুধ সঠিকভাবে খেলে সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।


* হাইপোথাইরয়েডিজম: থাইরয়েড হরমোন কম উৎপাদিত হলে শরীরের মেটাবলিজম কমে যায়। খিদের সংকেত দুর্বল হয়ে যায় এবং ওজন বাড়তে শুরু করে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি কার্যকর।


* মাইগ্রেন: তীব্র মাথাব্যথা, বমি ও বমিভাব মাইগ্রেন রোগীর খিদে নষ্ট করে দেয়। অনেক সময় মাইগ্রেন সেরে গেলেও স্বাভাবিক খিদে ফেরার জন্য কিছুটা সময় লাগে।


* অবসাদ: মন খারাপ বা বিষণ্নতার কারণে অনেকেরই খিদে পায় না। আবার কারও ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া উচিত।

* কনকাসন (মাথায় আঘাত): মাথায় আঘাত পাওয়ার পর মাথাব্যথা, বমি বা গন্ধ না পাওয়া থেকে খিদে কমে যায়। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। 

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খিদে না পাওয়া কখনও ছোট সমস্যা, আবার কখনও বড় রোগের ইঙ্গিত হতে পারে। যদি বারবার এমন হয়, সঙ্গে ক্লান্তি, দুর্বলতা বা ওজন কমার মতো উপসর্গ থাকে, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।