ঘরে, বাইরে সবর্ত্র মশার আনাগোনা নিত্যদিন। শীত, গ্রীষ্ম বা বর্ষা যে কোনও ঋতুতে দিন-রাত মশার দাপাদাপিতে অস্থির মানুষ। মশা তাড়ানোর ধূপ, কয়েল, স্প্রে, র্যাকেটের বিজ্ঞাপনে চারদিক ছয়লাপ। কিন্তু যতই চেষ্টা করুন, মশার হাত থেকেও যেন নিস্তার নেই। গুরুত্বপূর্ণ কাজের মাঝে হোক কিংবা নির্জনে নিরিবিলি অবসরে সময় কাটানো কিংবা রাতে সবে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়েছেন, ওমনি কানের কাছে মশার উৎপাত থেকে রেহাই নেই। ভারত তো বটেই মশার দাপট থেকে বাঁচতে পারেনি সুইজারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড কিংবা আমেরিকার মতো দেশগুলোও। তবে জানেন কি এই বিশ্বে এমন একটি দেশ রয়েছে যেখানে নেই একটিও মশা। হ্যাঁ ঠিকই পড়ছেন। শুধু মশা নয়, সেখানে একটি পোকামাকড়র, সাপেরও দেখা মিলবে না। এমনকী মশা বা পোকামাকড় সম্পর্কে সেদেশের মানুষের তেমন কোনও ধারণাও নেই।
মশাহীন সেই দেশটির নাম হল আইসল্যান্ড। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত এটিই এটিই বিশ্বের একমাত্র মশামুক্ত দেশ। যেখানে জনসংখ্যার প্রায় ১,৩০০ প্রজাতির প্রাণী থাকলেও মশার কোনও চিহ্নও নেই। আইসল্যান্ডের প্রতিবেশী নরওয়ে, ডেনমার্ক, স্কটল্যান্ড আইসল্যান্ডে কেন মশা নেই তা একটি রহস্যই বটেই। কিন্তু কী কারণে এখানে একটিও মশা নেই বলুন তো? আসলে মশার বংশবৃদ্ধির জন্য অগভীর জলাশয় কিংবা জমা স্থির জলের প্রয়োজন হয়। সেখানে মশা ডিম পাড়ে এবং সেই ডিম থেকে জন্মায় লার্ভা। এই মশার লার্ভা জন্মানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে জমে থাকা জলের প্রয়োজন হয়। মশার জীবনচক্র পরিপূরণের জন্য এই আইসল্যান্ডে কোনও স্থির জলাশয় নেই। ফলে সেদেশে মশা বংশবৃদ্ধি করতে পারে না।
মশা না থাকার আরও একটি কারণ হল আইসল্যান্ডের তাপমাত্রা। এখানে কখনও কখনও তাপমাত্রা মাইনাস ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গিয়ে পৌঁছায়। ফল সামান্য জলও অতি দ্রুত জমে যায়। এই কারণে এখানে মশার দাপট নেই। এছাড়াও আইসল্যান্ডের জল, মাটি এবং সাধারণ বাস্তুতন্ত্রের সংমিশ্রণ মশাদের জন্মের জন্য সহায়ক নয়।

পৃথিবীতে মশার বয়স ৩০ কোটি বছরেরও বেশি। বিশ্বব্যাপী মশার ৩,৫০০ টিরও বেশি প্রজাতি রয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে মশা ভেজা আর্দ্র পরিবেশে বাঁচে কিন্তু ঠাণ্ডায়ও বাঁচতে পারে। আইসল্যান্ডের জল এবং মাটির রাসায়নিক গঠন মশার প্রজননের জন্য উপযুক্ত নয়। কিন্তু কেন তা এখনও রহস্য যা বিজ্ঞানীরা কয়েক দশক ধরে সমাধান করার চেষ্টা করছেন।
