আজকাল ওয়েবডেস্ক: সোনা বিশ্বের অন্যতম মূল্যবান ধাতু, যা বিনিয়োগ, গয়না তৈরি এবং মুদ্রা তৈরিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। তবে, সোনার গুণমান প্রকারভেদে ভিন্ন হয়। আপনি সোনা নিজের জন্য কিনুন বা বিনিয়োগ করুন না কেন, কেনার আগে তার বিশুদ্ধতা যাচাই করা অপরিহার্য। ক্যারাট, রঙের পার্থক্য এবং হলমার্ক পরীক্ষা করে এটি নিশ্চিত করা যেতে পারে। আজকের প্রতিবেদনে আমরা সোনার বিশুদ্ধতা নির্ধারণের কৌশলগুলি সম্পর্কে জানব।
হলমার্ক কী এবং সোনার ওপর এটি কীভাবে পরীক্ষা করবেন?
হলমার্ক একটি আইনি শংসাপত্র যা সোনার গয়না আসল ও বিশুদ্ধতা কি ন তা নিশ্চিত করে। হলমার্ক হল সোনার উপর খোদাই করা একটি চিহ্ন, যা নিশ্চিত করে যে গহনাটি সরকার বা অনুমোদিত সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধতার মান পূরণ করে। ভারতে সোনার হলমার্কিংয়ের দায়িত্ব ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস (বিআইএস)-এর উপর থাকে। হলমার্ক ক্রেতাদের সোনার গুণমান নিশ্চিত করতে এবং প্রতারণা রোধে সহায়তা করে।
আপনি কেনার আগে সোনার বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করতে চাইলে, আপনাকে অবশ্যই দেখতে হবে যে বিআইএস-হলমার্কযুক্ত সোনার গহনাটিতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত আছে-
- বিআইএস লোগো: এই লোগোটি নিশ্চিত করে যে ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস গহনাটিকে ছাড়পত্র দিয়েছে করেছে।
- বিশুদ্ধতার চিহ্ন (ক্যারাট): বিশুদ্ধতার চিহ্নটি সোনা কতটা বিশুদ্ধ বোঝায়। যেমন, ২২ ক্যারেট (৯১৬), ১৮ ক্যারেট (৭৫০), বা ১৪ ক্যারেট (৫৮৫)।
- গহনা প্রস্তুতকারকের শনাক্তকরণ চিহ্ন: এখানে একটি বিশেষ কোড উল্লেখ করা থাকে যা গহনা প্রস্তুতকারককে শনাক্ত করার জন্য।
- অ্যাসেয়িং ও হলমার্কিং সেন্টারের চিহ্ন: এটি প্রমাণ করে যে সোনাটি বিআইএস অনুমোদিত একটি ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়েছে।
- হলমার্কিংয়ের বছর: গহনাটির সার্টিফিকেশনের বছর নির্দেশকারী একটি অক্ষর থাকে।
সোনার ক্যারেট কী এবং আমরা এটি কীভাবে পরিমাপ করি?
ক্যারাট হল সোনার বিশুদ্ধতা পরিমাপের একটি একক। হলমার্ক ছাড়াও, সোনার বিশুদ্ধতা নির্ধারণের জন্য ক্যারাট ব্যবহার করা হয়। এটি একটি সংকর ধাতুতে খাঁটি সোনার শতাংশ নির্দেশ করে। ২৪ ক্যারাট হল সোনার বিশুদ্ধতম রূপ। যেহেতু খাঁটি সোনা নরম এবং গহনা তৈরির জন্য অনুপযুক্ত, তাই এর স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্য এটিকে সাধারণত রুপা, তামা বা দস্তার মতো অন্যান্য ধাতুর সঙ্গে মেশানো হয়। ২৪ ক্যারাট সোনা ৯৯.৯ শতাংশ বিশুদ্ধ, ২২ ক্যারাট সোনা ৯১.৬ শতাংশ বিশুদ্ধ (তামা, রুপো এবং দস্তা মেশানো থাকে), ১৮ ক্যারাট সোনা ৭৫ শতাংশ বিশুদ্ধ (তামা, রূপা, প্যালাডিয়াম মেশানো থাকে। হীরা ও ডিজাইনার গহনায় সাধারণত ব্যবহার করা হয়), ১৪ ক্যারাট সোনা ৫৮.৩ শতাংশ (তামা, রূপা, নিকেল মেশানো থাকে। টেকসই গয়না ও ঘড়ি তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়), ১০ ক্যারাট সোনা ৪১.৭ শতাংশ বিশুদ্ধ (তামা, রূপা, দস্তা, নিকেল মেশানো থাকে)।
রঙ দেখে কীভাবে সোনার বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করবেন?
হলুদ সোনা: হলুদ সোনা হল সোনার প্রাকৃতিক রূপ। যা এর সমৃদ্ধ, উষ্ণ আভার জন্য পরিচিত। যেহেতু ২২ ক্যারেট এবং ২৪ ক্যারেট সোনা অত্যন্ত বিশুদ্ধ, তাই এগুলির রঙ সবচেয়ে উজ্জ্বল হলুদ হয়। অন্যদিকে কম ক্যারাটের সোনা তামা বা রুপার মতো অন্যান্য ধাতুর সঙ্গে মেশানোর ফলে কিছুটা অনুজ্জ্বল হয়।
সাদা সোনা: সাদা সোনার একটি মসৃণ, রুপালি আভা থাকে, যা বিশুদ্ধ সোনার সঙ্গে প্যালাডিয়াম বা রুপোর মতো ধাতু মিশিয়ে তৈরি করা হয়। ১৮ ক্যারাট সাদা সোনা এর স্থায়িত্ব এবং সৌন্দর্যের কারণে বাগদানের আংটির জন্য বিশেষভাবে জনপ্রিয়। রোডিয়াম কোটিংয়ের কারণে এর একটি উজ্জ্বল সাদা ফিনিশ থাকে। যা এর ঔজ্জ্বল্য বাড়ায় এবং বিবর্ণ হওয়া থেকে রক্ষা করে।
রোজ গোল্ড: তামা মেশানোর কারণে এর একটি সুন্দর গোলাপি আভা থাকে। এটি গয়ানা তৈরিতে একটি জনপ্রিয় পছন্দ। স্থায়িত্ব এবং বিশুদ্ধতার আদর্শ অনুপাত বজায় রাখার কারণে, ১৮ ক্যারেট এবং ১৪ ক্যারেট রোজ গোল্ড প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত।
