আজকাল ওয়েবডেস্ক: চুল পড়ার সমস্যা এখন ঘরে ঘরে। নেপথ্যে অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, দূষণ এবং মানসিক চাপের মতো একাধিক কারণ। নারী পুরুষ নির্বিশেষে অনেকেই চুল নিয়ে চিন্তিত। সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অনেকে ভরসা রাখেন রাসায়নিক প্রসাধনীর উপর। কিন্তু সব সময় রাসায়নিক পদার্থ মাথায় ব্যবহার করা ঠিক নয়। নানান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এই অবস্থায় মুশকিল আসান হিসাবে পশ্চিমী দুনিয়ার ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে একটি বিশেষ থেরাপি। এই থেরাপিতে মাথার স্ক্যাল্পে অর্থাৎ মাথার ত্বকে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হচ্ছে শুক্রাণু। তবে মানুষের নয়। ব্যবহৃত হচ্ছে স্যামন মাছের শুক্রাণু।
একটি ব্রিটিশ সংবাদসংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী ব্রিটেনের একাধিক ক্লিনিকে এই ট্রিটমেন্ট দেওয়া শুরু হয়েছে। এই পদ্ধতিতে স্যামন মাছের শুক্রাণু কোষ থেকে ‘পলিনিউক্লিওটাইড’, অর্থাৎ ডিএনএ বা আরএনএ-র অংশ নিষ্কাশিত করে, মাইক্রোইনজেকশনের মাধ্যমে সেই উপাদান ত্বকের ইঞ্জেক্ট করানো হয়। খরচ পড়ে প্রায় ৪০০ ইউরো। যা ভারতীয় মুদ্রায় ৪০ হাজার টাকারও বেশি।
আরও পড়ুন: বিমান দুর্ঘটনায় মরেননি, জেতেন ৫ কোটির লটারি! সাতবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরা বিশ্বের সবচেয়ে ‘লাকি’ ব্যক্তি ইনি
আরও পড়ুন: শুক্রাণু দান করে কত টাকা আয় হয়? ভারতে বীর্য দাতা হতে গেলে কোন কোন নিয়ম জানতে হবে?
এই সব ক্লিনিকগুলির দাবি, স্যামন মাছের শুক্রাণুর মূল উপাদান, ‘পলিডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিওটাইড’-এর কার্যকারিতা নিয়ে একাধিক গবেষণা হয়েছে এবং তার ফলাফলও চমকপ্রদ। ২০২২ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এই ফেশিয়াল ত্বকের সূক্ষ্ম বলিরেখা কমাতে, কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে, রোদে পোড়া দাগ সারাতে, ক্ষতচিহ্ন দূর করতে এবং ত্বকের আর্দ্রতা বাড়াতে অত্যন্ত কার্যকর। এমনকি এই উপাদানের প্রভাবে ত্বকে ফাইব্রোব্লাস্ট নামের এক ধরনের বিশেষ অনু সক্রিয় হয়ে ওঠে। যা ত্বকের বয়স কমায়। মাথার ত্বকও ব্যতিক্রম নয়। যখন এই ইঞ্জেকশন মাথায় দেওয়া হয় তখন হেয়ার ফলিকল বা চুলের গোড়ার কোষ সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং দ্রুত চুল গজায়।
প্রসঙ্গত, এই স্যামন মাছের শুক্রাণু ব্যবহারের বিষয়টি প্রথম প্রচারের আলোয় আসে ২০২৩ সালে। হলিউড তারকা জেনিফার অ্যানিস্টন জানান যে তিনি এই পদ্ধতিতে রূপচর্চা করিয়েছেন। এর পরেই কিম কার্দাশিয়ানের মতো তারকাদের দৌলতে এর জনপ্রিয়তা হু হু করে বাড়তে থাকে। চুলের পাশাপাশি ‘স্যালমন স্পার্ম ফেশিয়াল’ হিসাবেও এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
কীভাবে কাজ করে এই ফেশিয়াল?
এই ফেশিয়ালের কার্যকারিতার মূল রহস্য লুকিয়ে রয়েছে এর কাজের ধরনে। এটির সাহায্যে ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন ব্যবস্থা উদ্দীপিত হয় এবং নতুন রক্তনালী তৈরি হয়। বোটক্সের সঙ্গে এর মূল পার্থক্য হলো, বোটক্স যেখানে সাময়িকভাবে পেশি অবশ করে বলিরেখা মসৃণ করে, সেখানে এই ইঞ্জেকশন কোষীয় স্তরে ত্বকের স্বাভাবিক নিরাময় প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে তোলে।
তবে গোটা বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করেছেন চিকিৎসকেরা। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। হুজুগে পড়ে এসব করলে হিতে বিপরীত হতে পারে বলেই আশঙ্কা তাঁদের।
