আজকাল ওয়েবডেস্ক: গোয়েন্দা বললেই বাঙালির মাথায় আসে ফেলুদা কিংবা ব্যোমকেশের কথা। বিশ্ব সাহিত্যেও তুখোড় সব গোয়েন্দাদের নাম নিতে গেলে এক বাক্যে উঠে আসে শার্লক কিংবা পয়রোর কথা। অন্তত সাহিত্যের অঙ্গনে নারী গোয়েন্দা চরিত্রের সংখ্যা হাতে গোনা। তবু এই পুরুষতান্ত্রিক প্রবণতা পেরিয়ে মিস মার্বেল বা মিতিন মাসিদের খুঁজে পাওয়া যায় কখনও কখনও। কিন্তু জানেন কি ভারতে সত্যি সত্যিই আছেন এমন একজন মহিলা গোয়েন্দা যিনি গত ৪০ বছর ধরে সমাধান করেছেন হাজারো রহস্যের। কেউ তাঁকে বলেন ভারতের প্রথম মহিলা ডিটেকটিভ, কেউ আবার বলেন লেডি জেমস বন্ড। তার আসল নাম রজনী পণ্ডিত।
আরও পড়ুন: পাড়ার বৌদিদের অন্তর্বাস চুরি একের পর এক! চোরকে সামনে পেয়ে এ কী করলেন মহিলারা?
কলেজে পড়ার সময় থেকেই গোয়েন্দা কাহিনিতে ভয়ানক আসক্তি ছিল রজনীর। সেই সময়েই মনে মনে স্থির করে নেন পেশা হিসাবেও গোয়েন্দাবৃত্তিকেই বেছে নেবেন তিনি। যেমন ভাবা তেমন কাজ। মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা রজনী ১৯৮৬ সালে খুলে ফেলেন নিজের ডিটেকটিভ সংস্থা। নাম দেন ‘রজনী ইনভেস্টিগিটিভ ব্যুরো’। প্রায় চার দশক পেরিয়ে সেই সংস্থা এখন ধারে ভারে অনেকটাই বড় হয়েছে। সেখানে এখন গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করেন প্রায় ৩০ জন।
আরও পড়ুন: পাড়ার বৌদিদের অন্তর্বাস চুরি একের পর এক! চোরকে সামনে পেয়ে এ কী করলেন মহিলারা?
তবে এই যাত্রা খুব একটা সহজ ছিল না মুম্বইয়ের মাহিমে যখন তিনি প্রথম অফিস খোলেন তখন কোন সংবাদপত্র সেই অফিসের বিজ্ঞাপন দিতে চাইছিল না। কারণ তখন সম্পাদকরা মানতেই চাননি যে একজন মহিলা প্রাইভেট ডিটেকটিভ হিসেবে কাজ করতে পারেন। ১৯৮৮ সালে একটি খুনের তদন্ত করতে গিয়ে রজনী একটি বাড়িতে প্রায় ৬ মাস পরিচারিকা হিসাবে কাজ করতে ঢোকেন। ছয় মাসের দীর্ঘ তদন্তে তিনি জানতে পারেন সেই খুনের মূলে রয়েছেন সেই বাড়ির গৃহকর্ত্রী নিজেই। তিনিই নিজের প্রেমিকের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে খুন করিয়েছেন। গোপন রেকর্ডার এবং ক্যামেরার মাধ্যমে তথ্য প্রমাণও জোগাড় করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত আসল খুনিকে ধরিয়ে দেন পুলিশের কাছে। এই কেসটিই তাকে এনে দেয় বহু প্রতীক্ষিত খ্যাতি।
এখানেই শেষ নয়, তদন্তের স্বার্থে কখনও অন্ধ, কখনও সবজি বিক্রেতা, কখনও বা মানসিক বিকারগ্রস্ত মহিলার ভূমিকায় অভিনয় করতে হয়েছে তাঁকে। তবে শুধু খুন বা অপরাধ নয়, অন্যান্য ধরনের তদন্ত করে তাঁর সংস্থা। নিখোঁজ ব্যক্তির খোঁজ, গার্হস্থ্য হিংসা, পরকীয়া কিংবা কর্পোরেট সংস্থার তথ্য কেউ চুরি করছে কি না সেইসব রহস্যও ভেদ করতেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। কাজে যাতে পারিবারিক সম্পর্ক বাধা না হয়ে দাঁড়ায়, তার জন্য বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হননি রজনী। একটি সাক্ষাৎকারের রজনী জানিয়েছেন, গোয়েন্দাগিরির পাশাপাশি করতে করতেই কখনও কখনও এমন কিছু সত্য প্রকাশ্যে আসে যা মানবিক দিক থেকেও দুর্ভাগ্যজনক। কখনও দেখা যায় বাড়ির সন্তান জড়িয়ে পড়েছে মাদকের আসক্তিতে, কখনও দেখা যায় মানসিক চাপ সহ্য না করতে পেরে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন দম্পতিরা। এই ধরনের কেসে মনোবিদদের সাহায্য নিতেও উৎসাহ দেন তিনি। 

তবে এতকিছুর পরেও রজনীকে নিয়ে কিন্তু রয়েছে বেশ কিছু বিতর্ক। ২০১৮ সালে ফোনের কল রেকর্ড চুরি করা এবং অর্থের বিনিময়ে তা বিক্রি করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় রজনীকে। রজনী নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও প্রায় ৪০ দিন জেলবন্দি থাকতে হয় তাঁকে। ৪০ দিন পর জামিন ছাড়া পান তিনি।