বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে হঠাৎ করেই বদলে যায় আবহাওয়ার চিত্র। সকাল থেকে রোদ থাকলেও দুপুরের পর কালো করে মেঘ করে আসে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা। প্রবল বৃষ্টির পাশাপাশি বজ্রপাত হতে থাকে জেলায় জেলায়। বাজ পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ১৭ জন। শোকের ছায়া নেমে এসেছে বহু পরিবারে।
বজ্রপাত একটি ভয়ংকর প্রাকৃতিক বিপদ। প্রাণঘাতীও হতে পারে। প্রতি বছর শত শত মানুষ বজ্রপাতে আহত হন বা মারা যান। বাজ পড়ার ফলে স্থির তড়িৎ উৎপন্ন হয়। যা বিদ্যুৎ আকারে মাটিতে নেমে আসে। আর সেই কারণেই খেয়াল করলে দেখবেন বাজ পড়ার কয়েক সেকেন্ড আগে মাথার চুল ও শরীরের লোম খাড়া হয়ে যায়। ঠিক যেভাবে শীতকালে চিরুনি দিয়ে মাথা আঁচড়ানোর সময় শুষ্ক চুল স্থির তড়িতের ফলে খাড়া হয়ে যায়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, খানিকটা সতর্ক হলে বজ্রপাতের বিপদ এড়ানো সম্ভব। কীভাবে বাজ পড়লে নিরাপদে থাকবেন, জেনে নিন-
* বজ্রধ্বনি শোনা মাত্রই নিরাপদ জায়গায় যানঃ বজ্রপাতের শব্দ শোনা মাত্রই বাড়ির ভিতরে চলে যান বা শক্ত কাঠামোর গাড়ির ভিতরে আশ্রয় নিন। অন্তত ৩০ মিনিট ধরে শেষ বজ্রধ্বনির পরেও ঘরের বাইরে যাবেন না।
* ঘরের ভিতরে থাকলেও সতর্ক থাকুনঃ অনেকে মনে করেন, ঘরের ভিতরে থাকলে পুরোপুরি নিরাপদ থাকা যায়। কিন্তু আসলে ঘরের ভিতরেও কিছু জিনিস এড়িয়ে চলতে হয়। যেমন এই সময়ে প্লাম্বিং বা পানির লাইন যেমন টয়লেট, বেসিন, ঝরনা ব্যবহার করা উচিত নয়, কর্ড-যুক্ত টেলিফোন বা বৈদ্যুতিক যন্ত্র ব্যবহার করবেন না বা আনপ্লাগ করে রাখুন, জানালার কাছাকাছি থাকাও উচিত নয়।
বাইরে থাকলে কী করবেন
যদি আপনি বাইরে থাকেন এবং আশেপাশে নিরাপদ আশ্রয় না থাকে, তাহলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম মেনে চলুন। যেমন-
* উঁচু জায়গা বা গাছপালা থেকে দূরে থাকুন
* খোলা জায়গা এড়িয়ে চলুন
* মাটিতে শুয়ে পড়বেন না, বরং নিচু হয়ে বসুন এবং দুই পা একসঙ্গে রাখুন
* যদি অনেকজন থাকেন, সবাই একটু দূরে দূরে ছড়িয়ে পড়ুন যাতে একজন আক্রান্ত হলেও বাকিরা সাহায্য করতে পারেন।
* চুল দাঁড়িয়ে যাওয়া বা ত্বকে ঝনঝন ধরা অনুভব করলে বুঝবেন বজ্রপাত কাছাকাছি আছে। তৎক্ষণাৎ দ্রুত নিরাপদ স্থানে যান

গাড়ির ভিতরে থাকলে কী করণীয়
ধাতব ছাদওয়ালা গাড়ির ভিতরে থাকা তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। তবে গাড়ির ধাতব অংশ স্পর্শ করা যাবে না। জানালা বন্ধ রাখতে হবে ঝড় পুরোপুরি থেমে না যাওয়া পর্যন্ত গাড়ির বাইরে বার হবেন না।
কেউ বজ্রাহত হলে কী করবেন
কেউ বজ্রাহত হলে জরুরি পরিষেবা যেমন অ্যাম্বুল্যান্স ডাকুন, যদি আক্রান্ত ব্যক্তি নিস্তেজ হয়ে যান বা শ্বাস নিতে না পারেন, তাহলে সিপিআর দিন। মনে রাখবেন, বজ্রাহত ব্যক্তি বিদ্যুৎ পরিবাহক নন, তাই তাকে ছুঁয়ে চিকিৎসা দেওয়া নিরাপদ
মনে রাখবেন, বজ্রপাত থেকে বাঁচতে হলে প্রথম ও প্রধান শর্ত হল সচেতনতা। তাই ঝড় শুরু হলে দেরি না করে নিরাপদ আশ্রয়ে যান। ঘরের ভিতরেও নিয়ম মেনে চলুন। আর যদি বাইরে থাকেন, তখন পরিস্থিতি বুঝে ঠান্ডা মাথায় সঠিক সিদ্ধান্ত নিন। সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপই হতে পারে আপনার জীবনরক্ষাকারী।
