গত কয়েক দশকে হু হু করে বেড়েছে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা। এক সময় মনে করা হত ডায়াবেটিস বয়স্কদের রোগ। কিন্তু বর্তমানে ৩০ পেরতে না পেরতেই ভোগাচ্ছে ব্লাড সুগার। এই রোগটি তখনই হানা দেয় যখন আমাদের শরীর কম ইনসুলিন তৈরি করতে শুরু করে অথবা সেই ইনসুলিন কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে না। ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায় এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মাফিক ওষুধের সঙ্গে আরও বেশ কিছু বিষয়ে নজর রাখা জরুরি।
অনেকেই ওষুধের পাশাপাশি ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঘরোয়া টোটকার সাহায্য নেন। বিশেষ করে তেতো খাবার খেলে ডায়াবেটিস জব্দ থাকে বলে মনে করা হয়। তাই অন্য কোনও তেতো খাবার খাওয়া সম্ভব না হলেও নিয়মিত উচ্ছে খাওয়ার চেষ্টা করেন ডায়াবেটিক রোগীরা। কিন্তু সত্যি কি উচ্ছে, করলা খেলে ডায়াবেটিস কমে? আসুন জেনে নেওয়া যাক আসল সত্যি।
উচ্ছে, করলা হল পুষ্টির খনি। ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক সহ বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে ভরপুর এই সবজি। এতে রয়েছে অনেকটা পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। যা প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করে। এছাড়া এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও কম। তাই সুগার রোগীরা অনায়াসে খেতে পারেন উচ্ছে ও করলা। তবে শুধু এই সবজি খেলেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে, এই ধারণা ঠিক নয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, উচ্ছে বা করলা এই দুই সবজি রক্তে সুগারের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে। এমনকী রক্তে শর্করার মাত্রা চটজলদি বাড়তে দেয় না। তাছাড়া এতে রয়েছে পলিপেপটাইড পি নামক একটি উপাদান। এই উপাদান সুগার স্পাইক আটকায়। অর্থাৎ হুট করে সুগার বেড়ে যায় না। কিন্তু তাই বলে উচ্ছে, করলা খেলেই যে সুগার কমে যাবে এমন নয়। আসলে উচ্ছে বা করলায় আছে পলিপেপটাইড-পি বা পি-ইনসুলিন নামক একটি যৌগ। যা প্রাকৃতিকভাবে ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন উচ্ছে খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

উচ্ছে কীভাবে খাবেন তার উপর উপকারিতা নির্ভর করে। সেক্ষেত্রে উচ্ছে ও করলার জুস করে খেলেই সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়। রোজ সকালে খালিপেটে এই জুস খেতে পারেন। এতেই সারাদিন সুগার বাড়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমবে। তবে মনে রাখবেন, সব খাবার সকলের জন্য এক রকমভাবে কাজ করে না। তাই উচ্ছে খেয়ে ডায়াবিটিস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকবে, এমনটা প্রযোজ্য নয়। এই বিষয়ে সবার আগে কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
মনে রাখবেন, বর্তমানে ‘প্রিভেনটিভ লাইফস্টাইল’ এখন চিকিৎসাবিদ্যার মূলমন্ত্র। তাই ডায়াবেটিস ঠেকাতে নিয়মিত হাঁটা বা শরীরচর্চা করুন, শর্করা ও প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খান, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন, স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করুন এবং পর্যাপ্ত ঘুমান। যদি আপনার পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকে তাহলে বেশি সতর্ক থাকা জরুরি।
