গুনে গুনে আর ঠিক দেড় মাস। তার পরেই বাজবে পুজোর বাদ্যি! আর কাঠি পড়বে পেটপুজোর ঢাকেও। বছরভর এই দিনগুলোর অপেক্ষাতেই তো দিন কাটে বাঙালির! ডায়েট-টায়েট তাকে তুলে কব্জি ডুবিয়ে খাওয়ার এই তো সময়! এ যুগের সদাব্যস্ত, ডেডলাইন-ধস্ত বাঙালি বাকি সারা বছরই রেস্তোরাঁ, ক্যাফে, ডেলিভারি অ্যাপের খানা-খাজানায় অভ্যস্ত। পুজোর ক’টা দিন তাই বরং বাড়িতেই জমিয়ে রান্নাবান্না করে ভুরিভোজের সাধ জাগে অনেকের। কেউ বসে থাকেন প্রিয় মানুষটার হাতে তৈরি পছন্দের খাবারের অপেক্ষায়। কেউ বা চান কাছের মানুষকে ভালমন্দ রেঁধে খাওয়াতে।
আপনি যদি হন দ্বিতীয় দলের মানুষ, তবে রান্নার অভ্যাস ঝালিয়ে নেওয়ার সময় কিন্তু ঠিক এখনই। ঘরে-বাইরে কাজের চাপে আজকাল অনেকেই ইচ্ছে থাকলেও রান্নাঘরে ঢোকার সময় পাননা তেমন, কেউ বা রোজকার রান্না করলেও আশ মিটিয়ে শখের রান্নার অবসরটুকু জোটে না। কিন্তু শারদীয়া স্পেশালে এক্কেবারে অন্যরকম কিছু রেঁধে বাড়ির লোক বা আত্মীয় বন্ধুদের তাক লাগিয়ে দিতে, প্রশংসায় ভরে যেতে কার না মন চায়! তবে এইবেলা বরং চটপট রান্নাঘরের স্কিলসেটে নজর দিন। আর ঘষেমেজে নিন সাধ্যমতো।
তা হলে কী কী করতে পারেন?
রেসিপি ভিডিও- রান্নায় পটু হয়ে ওঠার সবচেয়ে সহজ উপায় তো আক্ষরিক অর্থেই হাতের মুঠোয় রয়েছে। মানে, আপনার স্মার্টফোনে। সোশ্যাল মিডিয়ায়, ইউটিউবে, ওটিটি প্ল্যাটফর্মে এখন রেসিপি ভিডিওর ছড়াছড়ি। এছাড়া, টিভি বা রেডিওয় রান্না সংক্রান্ত অনুষ্ঠান তো রয়েছেই। সেখান থেকে রেসিপি বেছে নিয়ে মাঝেমধ্যেই ঢুকে পড়ুন রান্নাঘরে। ব্যস!
রান্নার ক্লাস- সে আপনি পেশাদারই হোন বা গৃহবধূ, ব্যস্ত শিডিউলে সময় বার করতে পারলে কিংবা ছুটির দিনগুলোয় কোনও রান্নার ক্লাস বা ওয়ার্কশপে যোগ দিতে পারেন। সেখান থেকেই শিখে নিতে পারেন পছন্দের রান্না। সশরীরে গিয়ে ক্লাসে যোগ দিতে পারলে তো কথাই নেই। সময়ের সমস্যা থাকলে নানা ধরনের অনলাইন ক্লাস বা ওয়ার্কশপের হদিশ পেয়ে যাবেন ইন্টারনেটেই।
কুকবুক – রান্না শেখানো বা রেসিপির নানা ধরনের বই পাওয়া যায়। দোকান বা ই-মার্স সাইট থেকে কিনে নিতে পারেন। ফোন, ল্যাপটপ, ট্যাব বা কিন্ডলে পড়তে চাইলে বিভিন্ন সাইট থেকে ই-বুক কেনা বা ভাড়া নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেকালের রান্নাই হোক বা আধুনিক প্রজন্মের পছন্দসই ক্যুইজিন, রকমারি ব্রেকফাস্ট হোক বা ক্যান্ডেললাইট ডিনারের পদ— যা চাইবেন, যেমনটা চাইবেন, সব আছে হাতের কাছে। ]রান্নার খাতা – অতীতে বাড়িতে বাড়িতে পছন্দসই রান্নার উপকরণ থেকে রেসিপি খাতায় লিখে রাখার চল ছিল। যাতে এক প্রজন্ম থেকে পরের প্রজন্মে এগিয়ে যেতে পারে সেই সব মনের মতো রান্না বা পারিবারিক হেঁশেলের সুস্বাদ। বাড়িতে খুঁজে দেখুন না, পুরনো আলমারি কিংবা ট্রাঙ্কে। মা-জেঠিমা, মাসি-পিসি কিংবা ঠাকুমা-দিদাদের সেই সব রান্নার খাতা থাকতেও তো পারে! সেগুলো কিন্তু অমূল্য রতন!
তবে শুধু রান্না শিখলেই তো হল না! আজকালকার কন্যেদের হাতে সময় পাওয়াটাই যে সবচেয়ে কঠিন বিষয়। প্রাইভেট সংস্থার কর্মী হলে তো কথাই নেই। পুজোর ছুটিও উঠি উঠি জীবন থেকে। ছুটি যদি বা থাকে, কাজের বোঝা যে কখন এসে চাপবে, সে বোঝা দায়! ফলে রান্না করে প্রিয়জনকে চমকে দেওয়ার আশ যতই থাকুক, সময় এবং এনার্জি বাঁচিয়ে তা করতে পারাটাও একটা চ্যালেঞ্জ। তাই সহজ এবং চটজলদি রেসিপির কদর যেমন বেশি, তেমনই রান্নাঘরের যে গ্যাজেটগুলো রান্নাটা কম পরিশ্রম এবং কম সময়ে করে ফেলার সুযোগ দেয়, তার খোঁজ রাখাটাও প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আপনার সহায় হতে পারে যে সব গ্যাজেট:
মাইক্রোওয়েভ – কম সময়ে এবং আপনার পরিশ্রম লাঘব করে যে কোনও বেকিং, গ্রিলড বা স্টিমড পদ কিংবা কনভেকশন মোডে করা যায়, এমন রান্না চটজলদি সেরে দিতে এর জুড়ি নেই। নানা ধরনের রাইস বা আমিষ পদও নির্দিষ্ট রেসিপি অনুযায়ী করে নিতে পারেন। নির্দিষ্ট তাপমাত্রা বা সময়ের বিষয়টা খেয়াল রাখলেই হল।
ওটিজি- তন্দুরি থেকে কেক, বেকড পদ থেকে গ্রিলড পদ, পিৎজা কিংবা কাবাব সবটাই সহজে হয়ে যায় বাড়িতে একটা ওটিজি থাকলে। দরকার শুধু এর নির্দিষ্ট তাপমাত্রা বা সময় সম্পর্কে একটু সড়গড় হয়ে নেওয়া। বাকিটা আপনার বাঁয় হাত কা খেল!
এয়ার ফ্রায়ার – ইদানীং স্বাস্থ্য বা ফিটনেস নিয়ে সচেতন অনেকেই। তাই বাড়তি তেল এড়িয়ে যেতে চান সযত্নে। এদিকে ভাজাভুজি খেতেও যে মন চায়! তাই পুজোর আড্ডার স্ন্যাক্স কিংবা ভাতের পাতের মুখরোচক বরং ভাজা হোক হাওয়াতেই, নামমাত্র তেলে! এক্ষেত্রে একটা এয়ার ফ্রায়ার এবং তার ব্যবহার সম্পর্কে ধারণাই হয়ে উঠতে পারেন আপনার মুশকিল আসান!

ইনডাকশন সেট – গ্যাস ওভেনের সামনে দাঁড়িয়ে রাঁধতে গিয়ে আগুন তাতে নাজেহাল? এখানে কিন্তু আপনাকে মুক্তির পদ খুঁজে দিতে পারে ইনডাকশন কুকার। আগুনের বালাই নেই! ঘাম ঝরা পরিশ্রমও নেই! শুধু টাইমার দিয়ে রান্না বসালেই হল!
মাল্টি কুকার- একাধিক জিনিস সেদ্ধ করতে হবে, এদিকে ঘড়ির কাঁটা দৌড়চ্ছে! কুছ পরোয়া নেই। মাল্টিকুকারে একসঙ্গেই বসিয়ে দিন সবজির সঙ্গে ডিম বা মাংস। ব্যস! ঝামেলা শেষ!
ইলেক্ট্রিক চপার – রান্নার চেয়ে অনেক বেশি সময় নিয়ে নেয় কাটাকুটি। আদা, পেঁয়াজ, সব্জি কাটতেই তো অর্ধেক সময় আর এনার্জি শেষ। সেটাই চটজলদি সেরে ফেলতে পারেন ইলেক্ট্রিক চপারে। কেমন কাটা হবে আর কতটা সময় লাগবে, সেটা যন্ত্রকে আদেশ দিলেই হল!
মিক্সার-গ্রাইন্ডার – কুটনো কোটার মতোই আরেকটা ঝামেলার কাজ হল মশলা পেষা বা বাটা। আধুনিক মিক্সার-গ্রাইন্ডারগুলোয় আগে থেকে সময় বা বাটা বা পেষার ধরন বেঁধে দিয়ে এ কাজগুলো সেরে ফেলার সুযোগ থাকে। ফলে মশলার পাউডার নয়, একেবারে বাড়িতে তৈরি মশলাতেই স্বাদ বাড়ুক আপনার রান্নার।
বাকিটা বুঝে নেবে উৎসবের ‘খানেওয়ালা পল’!
