কয়েক বছর আগেও কমবয়সিদের মধ্যে হৃদরোগ খুব একটা দেখা যেত না। বর্তমানে বয়স ৪০ পার হতে না হতেই চিন্তার ভাঁজ পড়ছে কপালে। ঝুঁকি বাড়ছে হার্ট অ্যাটাকের। আর হৃদরোগের কথা উঠলেই সাধারণত কোলেস্টেরলকে দায়ী করেন সকলে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, হৃদরোগের আসল নীরব ঘাতক কোলেস্টেরল নয়, বরং চিনি। হ্যাঁ, সম্প্রতি গবেষণায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে। অতিরিক্ত চিনি খাওয়া কোলেস্টেরলের তুলনায় হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বেশি বাড়িয়ে দিতে পারে।
চিনি যে শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর তা বর্তমানে কম-বেশি সকলেরই জানা। চিনি খাওয়ার অভ্যাসে শরীরে জাঁকিয়ে বসে ডায়াবেটিস, চড়চড়িয়ে বাড়ে ওজন, হানা দেয় একাধিক জটিল রোগ। এমনকী বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যালকোহল ও তামাকের মতো চিনিও আসক্তিকর। গবেষণায় প্রমাণিত, অতিরিক্ত চিনি খেলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। কিন্তু চিনি 'বিষ' জেনেও ক'জনই বা লোভ সামলাতে পারেন! আসলে রোজকার জীবনের খাদ্যতালিকায় কোনও না কোনওভাবে চিনি থাকেই।
ঠিক কীভাবে হার্টের ক্ষতি করে চিনি? আসলে শরীরে চিনির ক্ষতিকর প্রভাব বহুমুখী। এটি রক্তনালীর ভেতরের আবরণ দুর্বল করে দেয়, ফলে প্রদাহ বাড়ে। নিয়মিত চিনি খাওয়ার ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। শরীরের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত হয়, যার ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ঘন ঘন চিনি খেলে প্রতি ২ ঘণ্টায় এমনকী তার কম সময়েও খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। আর চিনি খাওয়া ছেড়ে দিলে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক থাকে। যা শরীরকে ক্রমাগত খাবারের চাহিদার পরিবর্তে সঞ্চিত শক্তি বার্ন করার জায়গা দেয়। ফলে ঘন ঘন খিদে পায় না। শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি হয় এবং রক্তের লিপিড প্রোফাইলের ভারসাম্য নষ্ট হয়, যা সরাসরি হৃদরোগের কারণ হতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে একবার অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ করলে হৃদরোগের ঝুঁকি ১৮ শতাংশ বাড়ে। দিনে দু'বার বা তার বেশি অতিরিক্ত চিনি খেলে ঝুঁকি বেড়ে যায় প্রায় ২১ শতাংশ পর্যন্ত। চিকিৎসকদের মতে, নিয়মিত ব্যায়াম করলেও যদি কেউ অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ করেন, তবে তিনি এই ঝুঁকি থেকে রক্ষা পান না।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ, বাজার চলতি যে কোনও খাবারের লেবেল দেখে চিনির পরিমাণ যাচাই করা উচিত। কোল্ড ড্রিঙ্ক, মিষ্টি স্ন্যাকস, সস বা প্রক্রিয়াজাত খাবারে থাকা চিনি এড়িয়ে চলুন। পরিবর্তে টাটকা ফল, শাকসবজি, ডাল, ডিম, মাছ ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
